কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এমন আবেদনকারীদের জন্য জারি করা হয় যারা তাদের
নির্দিষ্ট যোগ্যতার উপর প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। প্রবাসী কর্মী এবং আন্তর্জাতিক
অভিবাসিদের জন্য কানাডা একটি জনপ্রিয় জায়গা।
দেশটির অর্থনীতি এবং উন্নত জীবন যাত্রার উপর ভিত্তি করে এই দেশের উপর আকর্ষণ
অনেকেরই অনেক বেশি। কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আপনাদের
মাঝে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সূচিপত্র ঃ কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫
প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ কানাডায় বসবাস করে। কেউ শিক্ষার্থী হিসেবে
পড়াশোনা করার জন্য আসে কেউ বা আসে চাকরির জন্য আবার কেউ কেউ আসে পার্মানেন্ট
রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যারা কানাডায় আসতে চান তারা
অনেক সময় অনেক রকম মানুষের কাছে প্রতারণার শিকার হন।
আরো পড়ুন ঃ ফ্যাশন ডিজাইনার হতে গেলে কি করতে হয়
কানাডার অর্থনীতি অনেক উন্নত। দেশটির অর্থনীতি এবং উন্নত জীবনযাত্রার কারণে
অনেকেই কানাডায় পাড়ি জমান। আর তাই কানাডা যাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে ওয়ার্ক
পারমিট ভিসা। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম কানাডা যাওয়ার জন্য। সবগুলো
প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনাদের অনেকেরই অজানা। তাই আজকের আর্টিকেলে কানাডা ওয়ার্ক
পারমিট ভিসা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রকারভেদ
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা মূলত দুই প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-
ওপেন ওয়ার্ক পারমিট ঃ এটি এমন এক ধরনের ভিসা যা আপনাকে কানাডার
যেকোনো নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করার অনুমতি দেয়। এখানে কোন কোম্পানি আপনার জন্য
নির্দিষ্ট বাছাই করা থাকে না বা নির্দিষ্ট কোন পেশা আপনার জন্য বাছাই করা
থাকে না। এর মাধ্যমে আপনি আপনার জন্য বিভিন্ন চাকরি খুঁজে নিতে পারেন।
এম্প্লয়ের স্পেসিফিক ওয়ার্ক পারমিট ঃ এটি এমন একটি ভিসা যার
মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোন নিয়োগকর্তার মাধ্যমে কাজ করতে হয়। যে কোম্পানিতে আপনি
কাজ করবেন সেখানে আপনি বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন এই ভিসার মাধ্যমে। এই ভিসার
মাধ্যমে কাজ করতে গেলে আপনাকে নিয়োগ কর্তার কাছ থেকে অনুমতি পত্র নিতে
হবে।
কানাডা ওয়ার্ক ভিসা কিভাবে করা হয়
সরকারি বেসরকারি দুই ভাবেই কানাডা ওয়ার্ক ভিসা করা হয়। কানাডা ওয়ার্ক পারমিট
ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে অহরহ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এজন্য আপনাকে
ভিসা পাওয়ার সঠিক মাধ্যম এবং উপায় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। বর্তমানে
সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে এবং
নিজে ভিসা প্রস্তুত করার মাধ্যমে পাড়ি জমাতে পারেন কানাডায়।
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে জব অফার লেটার প্রয়োজন হয়।
এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
চাকরি খুজে নিতে পারেন। আবেদনকারীদের কোম্পানির সাক্ষাৎকার নিয়ে চূড়ান্ত ফলাফল
দিয়ে থাকেন। তারপর ভিসা প্রস্তুত করার মাধ্যমে কানাডা যাওয়ার সুযোগ তৈরি
করতে পারেন। নিজে নিজে কাজ করতে অনেক বেশি ঝামেলা ও বিরক্তি মনে হলে কোন এজেন্সির
আন্ডারে কাজ করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার কাজগুলো অনেক সহজ হবে।
কানাডা ভিসা পেতে কি কি লাগে
সাধারণত ভিসা আবেদন করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। ভিসা আবেদন ফর্ম এর
সাথে নির্দিষ্ট কিছু ডকুমেন্ট আছে যা স্ক্যান করে নিতে হয়। যা পরবর্তীতে ভিসা
তৈরিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিলে এবং সকল প্রসেস
ঠিক থাকলে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে আপনার ভিসা প্রস্তুত করা হয়ে যাবে। তবে অনেক
সময় ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কানাডা
যেতে যে সকল কাগজপত্র লাগে সেগুলো হলো-
- বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট। তবে পাসপোর্ট এর মিনিমাম বয়স ৬ মাস থাকতে হবে।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে.
- অনলাইন কানাডা ভিসা আবেদন ফরম জমা দিতে হবে।
- প্রয়োজন হলে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
- প্রয়োজন হলে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে।
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়।
- কাজের চুক্তিপত্র
- ওয়ার্ক পারমিট এর কাগজপত্র
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
- সিভি ও কাজের দক্ষতা সার্টিফিকেট
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতা
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ কত?
বাংলাদেশ থেকে কানাডা যেতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা লাগে। সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে
কানাডা আপনি যেতে পারবেন না তবে নিজ খরচে ভিসা প্রসেসিং এর মাধ্যমে আপনি
কানাডা যেতে পারেন। বিভিন্ন এজেন্সি অনুযায়ী বিভিন্ন রকম খরচ হয়ে থাকে।সাধারনত
কানাডা ওয়ার্ক ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে সবথেকে ১৫ লাখ টাকার মত খরচ
হয়। নিজে নিজে ভিসা করলে অনেক সময় খরচ কম আসে কিন্তু কোন এজেন্সির মাধ্যমে করলে
তুলনামূলক খরচ বেশি আসে।
কানাডা যেতে কত সময় লাগে?
বর্তমানে কানাডা যেতে মোটামুটি ১২ থেকে ১৮,১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। তবে মাঝে
মাঝে বিমানের বিরতির উপর নির্ভর করে সময় একটু কম বেশি হতে পারে। একবার বিরতি
নিয়ে কানাডা পৌঁছাতে মোটামুটি ২৪ ঘণ্টা বা ১ দিন থেকে শুরু করে একদিন ৬-৭
ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যায়। আবার যদি মাঝপথে দুইবার বিরতি নেওয়া হয় তাহলে একদিন
৯-১০ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদনের ধাপ
সঠিক ওয়ার্ক পারমিট গ্রহণ করুনঃ কানাডা যেতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে
সঠিক ওয়ার্ক পারমিশন গ্রহণ করতে হবে। ওপেন পারমিট ভিসা গ্রহণ করতে নিয়োগকর্তার
সঙ্গে কোন কাজের বাধ্যবাধকতা থাকেনা। এটি একটি সাধারণ কাজের অনুমতি যা
আপনি সেই দেশের যে কোন জায়গায় করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার
কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। আবার ইমপ্লোয়ার স্পেসিফিক ওয়ার্ক
পারমিট রয়েছে যেখানে নির্দিষ্ট কোম্পানিতে কাজ করার অনুমতি দেয়। আপনি কেবল
সেই কোম্পানিতে চাকরি করতে পারবেন যেখান থেকে আপনাকে অনুমতি দেওয়া হবে। এই
পারমিশন গ্রহণ করে আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন পত্র জমা দিতে হবে।
অবশ্যই একটি চাকরি খুঁজুন ঃ কানাডা যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একটি
চাকরি খুঁজে যাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে একটি ভালো চাকরি পেতে গেলে অবশ্যই আপনার
দক্ষতা এবং যোগ্যতা থাকতে হবে। আপনি আপনার পছন্দের চাকরির জন্য আবেদন করে
কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে সেটি পেশ করতে হবে যে আপনার চাকরিটি বৈধ
এবং স্বীকৃত।
অনলাইন বা অফলাইনে আবেদন জমা দিন ঃ আপনার কাজের আবেদন এবং
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে কানাডার ইমিগ্রেশন অফিসে অনলাইনের মাধ্যমে অথবা
অফলাইনে জমা দিন। অফলাইনে জমা দিতে চাইলে ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে যেতে পারেন।
অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য প্রথমে তাদের ওয়েবসাইট লগইন করুন। তারপর
আপনার আবেদন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য সাবমিট করুন।
আর অফলাইনে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আবেদন ফরম পূরণ করে তথ্য দিয়ে ভিসা সেন্টারে
জমা দিন। আপনার আবেদন ফি পরিপূর্ণভাবে পরিশোধ করুন।
মেডিকেল ও বায়োমেট্রিক পরীক্ষা দিন ঃ এটি এটি অবশ্যই
একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যা আপনার ভিসা প্রস্তুত কে সহজ এবং কার্যকরী করে দিবে।
বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি বলতে যখন আপনি আবেদনপত্র জমা দিবেন তখন আপনার ছবি এবং
আপনাকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হবে। আর পাশাপাশি মেডিকেল টেস্ট অতীব জরুরি। কানাডা
সরকারের নির্দেশে নিকটস্থ হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিন।
আরও পড়ুন ঃ নওগাঁ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত জেনে নিন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স,সাক্ষাৎকার এবং অনুমোদন ঃ আপনি যে কোনরকম
অপরাধের সাথে যুক্ত নন তার একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আপনাকে জমা দিতে হবে। এটি
আপনার জন্মস্থান বা বর্তমান অবস্থানের উপর ভিত্তি করে দিতে হবে। তারপর কিছু
কিছু ক্ষেত্রে কানাডা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আপনাকে ডাকতে পারে। তারা আপনাকে যাচাই
করতে আপনাকে কিছু মৌখিক প্রশ্ন করতে পারে সে ক্ষেত্রে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন।
সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে আপনাকে অনুমোদন পত্র দেওয়া হবে। অনুমোদন
পত্র পাওয়ার পরেই আপনি চূড়ান্তভাবে কানাডা যাওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন।
শেষ কথা ঃ কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫ এর মাধ্যমে কানাডা যাওয়ার যাবতীয় তথ্য, খরচ
সময় সমস্ত কিছু আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা অনেক
উপকৃত হয়েছেন। এরকম আরো তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন কিছু জানা থাকলে অবশ্যই
কমেন্ট করে জানাবেন এবং ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url