তরমুজের বীজের গোপনীয় উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

জাম খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

তরমুজের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা হয়তো তেমন কিছু জানি না।গরমের দিনে তরমুজ যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারি তেমনই এর বীজ ও আমাদের জন্য অনেক উপকারি আর পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। তরমুজ খাওয়ার পরে অনেকেই এর দানা ফেলে দেন।

তরমুজের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে যদি আপনি জানেন তাহলে এর বীজ ফেলে না দিয়ে আপনিও সংরক্ষণ করে রাখবেন। চলুন তাহলে আপনাদের সাথে তরমুজের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।

সূচিপত্রঃ তরমুজের বীজের গোপনীয় উপকারিতা

• তরমুজের বীজের উপকারিতা
• তরমুজের বীজের পুষ্টিগুণ
• তরমুজ এবং এর খোসা খাওয়ার উপকারিতা
• তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়ম
• তরমুজের বীজ খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি
• কাদের তরমুজের বীজ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত
• শেষ কথা-তরমুজের বীজের উপকারিতা

তরমুজের বীজের উপকারিতা

তরমুজ খাওয়ার সময় আমরা এর বীজ ফেলে দেই যা আমাদের কাছে অনেক সময় বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর মনে হয়। কিন্তু এই বীজে যে এত পুষ্টিগুণ রয়েছে সে সম্পর্কে আমরা অজানা। পুষ্টিবিদরা বলেছেন তরমুজের বীজে আয়রন, ফোলেট এর মত বহু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। নিচে তরমুজের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের মাঝে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

আরও পড়ুনঃ রসুন খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক এবং অন্যান্য মিনারেলস যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি শরীরের বিভিন্ন সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে শক্তিশালী করে। তরমুজের দানা বা বীজ জিংকের প্রধান উৎস।

হজম শক্তি বাড়ায়ঃ তরমুজের বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো করে এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তরমুজের বীজে থাকা ফাইবার পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ তরমুজের বীজ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তরমুজে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজের বীজ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যা হৃদরোগের ঝুঁকি হতে রক্ষা করে।

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেঃ ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য উপাদান হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। আর এই উপাদান গুলো তরমুজের বীজে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। শুধু হাড় নয় পেশি গঠনেও সাহায্য করে তরমুজের বীজ। নিয়মিত তরমুজের বীজ খেলে অস্টিওপিরোসিসের মত রোগের ঝুঁকি কমে।

ত্বক ও চুল এর স্বাস্থ্যঃ তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড এবং প্রোটিন যা ত্বক সুস্থ রাখতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং চুল ঘন ও মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজের বীজের তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতেঃ পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে জিংক বেশ কার্যকরী।জিংক শুক্রানুর পরিমাণ বাড়ায়।এছাড়াও তরমুজের বীজ ম্যাঙ্গানিজ এর ভালো উৎস।ম্যাঙ্গানিজ পুরুষের প্রজনন বাড়াতে খুব ভালো কাজ করে।

তরমুজের বীজের পুষ্টিগুণ

তরমুজের বীজে অনেক রকম কর উপাদান রয়েছে। তরমুজের বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। এছাড়াও তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার,প্রোটিন, ফাটি এসিড,  ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম,আয়রন এবং জিংক। তরমুজের বীজে যে উপাদান গুলো রয়েছে তা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকারি এবং উপকারী। যেমন-

আয়রনঃ হিমোগ্লোবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো আয়রন। আয়রন শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে। তরমুজের বীজে ফাইটেট নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা আয়রনের শোষণ এবং পুষ্টিগুণ হ্রাস করতে সাহায্য করে।

ম্যাগনেশিয়ামঃ তরমুজের মধ্যে সব উপাদানের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম অন্যতম। শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারে এই তরমুজের বীজ। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হৃদপিণ্ড এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ কার্যকর।

জিংকঃ তরমুজের বীজ জিংক এর ভালো উৎস। জিংক এমন একটি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়াও জিংক শরীরের পচনতন্ত্র,স্নায়ুতন্ত্র ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ক্যালোরি ও ভালো চর্বিঃ তরমুজের বীজ পলি আনস্যাচুরেটেড এর ভালো উৎস। গবেষণায় জানা গেছে তরমুজের ডিজে ভালো ফ্যাট পাওয়া যায় যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মত মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আর ক্যালরির কথা চিন্তা করলে তরমুজের বীজ খাওয়া অনেক উপকারী কারণ আলুর চিপস এর চেয়ে তরমুজের বিচিতে ক্যালরি কম থাকে সুতরাং এটি খেলে কোন সমস্যা হবে না।

এছাড়াও তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা পেটের যাবতীয় সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তরমুজের ডিজে অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি মিনারেলস রয়েছে অনেক বেশি যা ডিহাইড্রেশনের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

তরমুজ এবং এর খোসা খাওয়ার উপকারিতা

তরমুজের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। এটি গ্রীষ্মকালীন একটি ফল এবং অত্যন্ত গরমে শরীরকে ঠান্ডা করতে তরমুজ অত্যন্ত উপকারী এবং পুষ্টিকর একটি ফল। তরমুজের সাথে তরমুজের বীজ যেমন উপকারী তেমনি এর খোসাও অনেক উপকারী।

আরও পড়ুনঃ আখের রসের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

১। তরমুজের খোসায় অনেক রকম ভিটামিন রয়েছে। তরমুজের খোসায় সিট্রোলাইন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা রক্তনালী প্রসারে সাহায্য করে। তাই তরমুজের পাশাপাশি তরমুজের খোসা খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।

২। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে তরমুজের খোসা বেশ কার্যকরী। এছাড়াও তরমুজের খোসা রক্তের অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে। গবেষণায় জানা গেছে তরমুজের খোসা কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে তাই ডায়াবেটিস রোগীরা তরমুজের খোসা খেলে অনেক ভালো উপকার পাবেন।

৩। তরমুজের খোসায় ফাইবার থাকায় এটি পেটে যাবতীয় সমস্যা বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজে অধিকাংশই পানি থাকায় শরীরকে ডিহাইড্রেশনের হাত থেকে রক্ষা করে।

তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়ম

তরমুজ খাওয়ার সময় সচরাচর আমরা এর বীজ ফেলে দিই। এই বীজ আমাদের জন্য অস্বস্তিকর এবং বিরক্তিকর কারণ হতে পারে তরমুজ খাওয়ার সময়। তবেতরমুজের বীজ এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কথা চিন্তা করে তরমুজের বীজ খাওয়া নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়মিত তরমুজ খেলে অনেক রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। তরমুজ খাওয়ার সময় এর বীজ খেলে না দিয়ে তা সংরক্ষণ করে রাখুন।

পরবর্তীতে এটি পরিষ্কার করে কাঁচা অবস্থাতেই খেতে পারবেন অথবা চাইলে এটি ভেজে খেতে পারবেন। বাইরের দেশে তরমুজের বী জ আলাদাভাবে কিনতে পাওয়া যায় এবং তার জন্য অনেক মূল্য নির্ধারণ করা থাকে। গবেষকদের মতে তরমুজের বীজ শরীর সুস্থ রাখতে এবং রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে কার্যকরী। তাই তরমুজ খাওয়ার সময় এর বীজ খেলে না দিয়ে তা সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে খেতে পারেন।

তরমুজের বীজ বীজ খাওয়ার জন্য প্রস্তুত

তরমুজের বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানার পরে অনেকেই হয়তো এই বীজ খেতে চাইবেন। কিছু পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসরণ করে তরমুজের বিষ খেতে পারেন। যেমন-

১। প্রথমে বীজগুলো পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন এরপর এটি কাঁচা অবস্থাতেই খেতে পারেন।

২। বীজ পরিষ্কার করে শুকিয়ে হালকা তেলে বা হালকা তাপে ভেজে নিতে পারেন। লবণ মিশিয়ে এই বীজ খেতে পারেন।

৩। তরমুজের বীজ সালাতের সাথে বা যুদ্ধের সাথে ব্লেন্ড করে খেতে পারেন।

৪। তরমুজের বীজ গুড়া করে নিতে পারেন এরপর এটি পানির সাথে মিশিয়ে শরবতের মতো খেতে পারেন।

৫। বিভিন্ন খাবারের সাথে তরমুজের বীজ রান্না করে খেতে পারেন।

কাদের তরমুজের বীজ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত

তরমুজের বীজের উপকারিতা অনেক থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তরমুজের বীজ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কাদের তরমুজের বীজ খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-

১। তরমুজের দানায় অতিরিক্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় কিছু কিছু সময় কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তা এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজের বীজ খেলে পেট ফাঁপা, বদ হজম,বমি বমি ভাব এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তারা তরমুজের বীজ খাওয়া বন্ধ করে দিন।

২। যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা তরমুজের বীজ খাওয়া এড়িয়ে চলতে পারেন কারণ অনেক সময় এতে অ্যালার্জি প্রভাব দেখা দিতে পারে। তরমুজের বীজ খাওয়ার সাথে সাথে এলার্জি সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৩। তরমুজের দানায় প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকায় কিডনি আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে একটু ঝুঁকিপূর্ণ। পটাশিয়াম কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে তাই কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে তরমুজের বীজ খাওয়া এড়িয়ে চলায় উত্তম।

৪। তরমুজের বীজে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকাই পাকস্থলীর সমস্যায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে তরমুজের বীজ না খাওয়াই উত্তম।

তাই তরমুজের বীজ খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন। তরমুজের বীজের পুষ্টিগুন ও উপকারিতার কথা বিবেচনা করে তরমুজের বীজ খেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।

শেষ কথা-তরমুজের বীজের উপকারিতা

তরমুজের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। তরমুজের বীজের পুষ্টিগুণ এবং সার্থক উপকারিতার কথা চিন্তা করে নিয়মিত তরমুজের বীজ খেলে অনেক উপকার পাবেন। তরমুজের বীজে বিভিন্ন ভিটামি, মিনারেল স থাকায় এটি আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী।

আরও পড়ুনঃ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার কয়েকটি কার্যকরী উপকারিতা

তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে তোর মতো বীজ হওয়া উচিত। আশা করি আমার এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনারা বিস্তারিত সবকিছু জানতে পেরেছেন। আমার এই লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এরকম নতুন নতুন আরো তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।