বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ কমানোর সেরা ১০ টি উপায়

বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ একটি অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া আর এটা অভিভাবকের জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত জেদ করা অনেক বাচ্চারই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।শিশুদের জেদ মুক্ত এবং অতিরিক্ত রাগ থেকে রক্ষা পেতে তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত।
বাচ্চাদের-অতিরিক্ত-জেদ
সাধারণত শিশুদের জেদ একটি বংশগত বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকে। বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ তার বাবা মার জন্য অত্যন্ত দুশ্চিন্তার একটি বিষয়। আজকের এই আর্টিকেলে বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ কমানোর উপায় সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত তুলে ধরবো।

সূচিপত্র ঃ বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ করার কারণ

বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ করার কারণ

বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ এবং রাগের বেশ কিছু কারণ রয়েছে তার মধ্যে প্রধান হল বংশগত বা জিনগত বৈশিষ্ট্য। জেদ করে না এমন বাচ্চা নাই বললেই চলে। অনেক বাবা মা বাচ্চাদের জেদ সামলাতে না পেরে বাচ্চাদেরকে গালিগালাজ এবং মারধর পর্যন্ত করে আবার অনেক বাবা মা বাচ্চা যে কারণে জেদ করে সেটি সাথে সাথে পূরণ করে দেন। অনেক সময় দেখা যায় এমন আচরণ করতে করতে বাচ্চাদের এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
বড়দের মতোই শিশুদেরও অনেক রকম চাহিদা থাকে যা অনেক সময় কোন বাচ্চা বলতে পারে আবার কোন বাচ্চা মুখে প্রকাশ করতে পারে না তখনই সে রাগ আকারে প্রকাশ করে। আমরা বড়রা নিজেদের অনুভূতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি কিন্তু শিশুরা তা পারে না। এ কারণে তাদের হতাশা, ক্ষোভ আর অভিমান শুরু হয় যার ফলে তাদের বাহ্যিক আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

শিশুর অতিরিক্ত জেদ হলে করণীয় কি?

অতিরিক্ত জেদ হলে আমরা কিছু কাজ করতে পারি যা বাচ্চার জেদ কমাতে সাহায্য করবে। যেমন-
  • শিশু কি বলতে চায় তা মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং বাচ্চার কাজের প্রশংসা করুন।
  • লেখাপড়ার পাশাপাশি ধর্মীয় আচরণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিন।
  • সব সময় অতিরিক্ত বকাঝকা বন্ধ করুন এতে শিশুর মেজাজ আরো খিটখিটে হয়ে যায়।
  • ভালো কাজের জন্য উৎসাহ দিন এবং মাঝে মাঝে পুরস্কার দিন।
  • শিশুর কোন খারাপ আচরণ বা খারাপ কোন গল্প বা জেদের কথা অন্যদের সামনে আলোচনা করবেন না। বাচ্চার সামনে বাচ্চার খারাপ দিক কারো সামনে তুলে ধরা থেকে বিরত থাকুন।
  • বাচ্চারা অতিরিক্ত জেদ করলে তাদেরকে আদর করুন বুঝিয়ে বলুন এবং কোলে তুলে নিন। দেখবেন সাথে সাথে বাচ্চার রাগ বা যে কমে যাবে।
  • বাচ্চাদের সামনে সব সময় উচ্চস্বরে কথা বলবেন না এবং তাদের সামনে ঝগড়াঝাঁটি থেকে বিরত থাকুন।
  • শিশুদের প্রতিদিনের কাজের একটি রুটিন তৈরি করুন। বাচ্চাদের দৈনন্দিন সবকিছু বাচ্চাদের সাথে শেয়ার করুন।
  • আপনার বাচ্চা রেগে গেলে আপনি নিজের শান্ত থাকুন এবং তাকে বুঝিয়ে বলুন। বাচ্চার রাগের সময় তার ভালো কাজের প্রশংসা করুন এটি ম্যাজিকের মত কাজ করে।

বাচ্চাদের জেদ বন্ধ করার উপায়

সাধারণত তিন বছর বয়সের পর থেকে শিশুদের জেদ বেশি লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় এই সময় শিশুর আচরণ বিধিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না যার ফলে শিশুর মানসিক বিকাশে সমস্যা দেখা দেয়। এই সময় একজন অভিভাবক হিসেবে আমাদের যা যা করণীয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

নিজেকে শান্ত রাখুন ঃ শিশু অতিরিক্ত জেদ করলে তার সাথে সবসময় উগ্র ব্যবহার করা উচিত না। এই সময় নিজেকে কন্ট্রোল করুন ও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন। শিশুকে ঠান্ডা মাথায় বুঝান এবং তার ভালো কাজের প্রশংসা করুন।

শিশুকে ব্যস্ত রাখুন ঃ অতিরিক্ত জেদের সময় বাচ্চাকে কোন কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। কোন খেলার মধ্যে অথবা বাচ্চাকে নিজের সময় দিয়ে তার রাত বাজেট নিয়ন্ত্রণ করে অন্যদিকে মোটিভেট করুন। এতে বাচ্চা নিজের জেদ ভুলে যাবে পাশাপাশি নিজেকে নিজে কন্ট্রোল করার মনোভাব সৃষ্টি হবে।

মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন ঃ শিশুর মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন শিশু কি বলতে চাচ্ছে কি বুঝাতে চাচ্ছে তা ঠান্ডা মাথায় বুঝুন। বাচ্চাকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করুন সে কি করতে চায় সে কি পছন্দ করে সেদিকে মনোযোগ দিন।

অতিরিক্ত শাসন বন্ধ করুন ঃ অতিরিক্ত শাসন বাচ্চার জন্য আরো খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বাচ্চার রাগ বা জেদের সময় আপনি যদি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে বাচ্চাকে মারধর বা গালিগালাজ করেন এতে বাচ্চার মানসিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে। উল্টা বাচ্চার রাগ ও জেদ আরও বেড়ে যাবে।

কোন বয়স থেকে বাচ্চাদের জেদ শুরু হয়?

একটি নির্দিষ্ট বয়সে বাচ্চাদের জেদ বেশি হয়। মূলত এক থেকে দেড় বছর বয়সের পর থেকে বাচ্চারা সবকিছু বুঝতে শেখে কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারে না। তাদের মনের মত কোন কিছু না পেলেই তারা যে শুরু করে দেয় এবং অভিমান ও রাগ প্রকাশ করে। তবে বেশিরভাগ সময় চার থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই এই রাগ অনেকটা কমে যায়।
আবার যদি কোন বাচ্চার বংশগত কারণে জেদ বেশি হয়ে থাকে তাহলে অনেক সময় দেখা যায় এটি ভালো হতে চায় না। দিন যায় আর বাচ্চার রাগ ও জেদ বেড়েই চলে। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে বাচ্চার সাথে রাগারাগি না করে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে কথা বলুন। বাচ্চার প্রশংসা বেশি বেশি করুন। এতে বাচ্চার রাগ ও জেদ অনেকটাই কমে যাবে।

বাচ্চাদের জেদ সামলানোর সহজ ১০ টি উপায়

সাধারণত জেদ হলো বংশগত এক প্রকার বৈশিষ্ট্য। আবার অনেক সময় পরিবেশগত কারণে বাচ্চাদের অতিরিক্ত রাগ ও জেদ হয়ে থাকে। বাচ্চাদের জেদ সামলানোর সহজ ১০ টি  উপায় নিচে দেওয়া হল।
  • বাচ্চা অতিরিক্ত রাগ ও যে করলে তার সামনে থেকে সরে পড়ুন কিছু সময়ের জন্য। দেখবেন কিছুক্ষণ পরে বাচ্চা একা একাই তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে।
  • অতিরিক্ত রাগ ও জেদের সময় বাচ্চাকে কথার মাধ্যমে বা কোন কাজের মাধ্যমে ভুলিয়ে রাখুন।
  • বাচ্চার ভালো কাজের উৎসাহ দিন এবং প্রশংসা করুন।
  • শিশুর রাগের কথা বা জেদ এর কথা কারো সামনে আলোচনা করবেন না।
  • বাচ্চার রাগ বা জেদের সময় তাকে শাসন করা থেকে বিরত থাকেন।
  • বাচ্চাকে সব সময় হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করুন এতে বাচ্চা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে।
  • বাচ্চাদের পর্যাপ্ত সময় দিন মাঝে মাঝে তাদেরকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হয় এতে তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হবে।
  • বাচ্চা যখন যেটা চাইবে সাথে সাথে সেটা দিবেন না আপনার সামর্থ্য থাকলেও আপনি তাকে বুঝিয়ে দিন যে জেদ করলেই সবসময় সেটি পাওয়া সম্ভব হয় না।
  • বাচ্চাদের আত্মসম্মানবোধ খুবই প্রখর তাই কারো সামনে বাচ্চাকে ছোট করে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

অতিরিক্ত জেদ করলে বাচ্চাদের যেভাবে সামলাবেন

বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ সামলানোর কিছু উপায় রয়েছে। যদিও অনেক সময় বাচ্চাদের সাথে সাথে অভিভাবক গণ নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। যার ফলে বাচ্চাদের উপর আরো খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেক সময় বাইরে ঘুরতে গেছেন অথবা বাসায় কোন মেহমান এসেছে তখন বাচ্চারা এমন সব বিষয়ের জন্য জেদ শুরু করে যার কারণে আপনি বিব্রতকর অবস্থায় শিকার হন।
এ সময় অতিরিক্ত রাগ বা জেদ সামলানোর জন্য আপনাকে খুব ঠান্ডা মাথায় থাকতে হবে এবং বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে এটা মানুষ পছন্দ করে না বা এ ধরনের বাচ্চাকে মানুষ ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু আপনাকে কখনোই উগ্র বা রাগী ভাব দেখানো যাবে না এতে বাচ্চা আরো বেশি রাগ করবে বা জেদ দেখাবে।

বাচ্চারা জেদ করলে অবিভাবকরা কি করবেন

বাচ্চারা অতিরিক্ত চেক করলে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন। তাদের ভালো কাজের প্রশংসা করুন। রাগের সময় তাদেরকে অন্য কোন কিছুর দিকে মনোযোগ ঘুরিয়ে দিন। তাদেরকে বকাঝকা না করে ঠান্ডাভাবে গুছিয়ে কথা বলুন। প্রয়োজনে কিছু সময় তাদের থেকে দূরে থাকুন। এতে নিজে নিজেই বাচ্চার রাগ অনেকটা কমে যাবে এবং পরে সে তার নিজের জন্য অনুতপ্ত হবে।
  • জেদের সময় বাচ্চাকে যেভাবে নিরাপদে রাখবেন
  • অতিরিক্ত রাগী এবং জেদি বাচ্চাদের নিয়ে বাবা-মাদের প্রচুর ভোগান্তির শিকার হতে হয়।জেদি বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
  • অতিরিক্ত রাগী এবং জেদি বাচ্চাদের পানি এবং আগুনের থেকে দূরে রাখুন।
  • স্কুলে তার বন্ধু-বান্ধবের সাথে মিলেমিশে থাকার পরামর্শ দিন যাতে বাচ্চা গন্ডগোল বা মারামারি না করে।
  • বাড়িতে থাকলে বাচ্চাদের রান্নাঘর থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
  • সঠিক খাদ্যাভাস তৈরি করুন। সঠিক পুষ্টিগুণ এবং খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা থাকলে বাচ্চাদের রাগের সমস্যা বেশি সৃষ্টি হয়।
  • মোবাইল টিভি এসব থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখুন। অতিরিক্ত শব্দ গারো রং এসব বাচ্চার আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে।

কখন একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

আপনার বাচ্চা যদি অতিরিক্ত রাগী বা জেদি হয়ে থাকে এবং আপনি কোনভাবেই বাচ্চাকে কন্ট্রোল করতে পারেন না তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। অনেক সময় বাচ্চার শারীরিক কোন সমস্যা বা কোন অসুস্থতার কারণে রাগ বা জেদ বেশি হয়ে থাকে। আবার পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অবনতি ঘটে এবং বাচ্চা অতিরিক্ত বদমেজাজি এবং খিটখিটে হয়ে যায়। তাই এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।ওষুধ সেবনের ফলে অনেক সময় এই সমস্যা দূর হয়ে যায়।

মন্তব্য ঃ বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ করার কারণ

বাচ্চাদের অতিরিক্ত জেদ করার কারণ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাদের সাথে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের সাথে থাকবেন কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url