অল্প বয়সে মাথার চুল পাকার কারণ ও তার প্রতিকার

অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ এ অনেকেই নানা রকম বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর অবস্থার সম্মুখীন হন। সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের চুল পাকা শুরু হয়। কিন্তু অল্প বয়সে চুল পেকে গেলে অনেকেই খুব টেনশন করেন যে তাদের কোন রোগ হয়েছে কিনা।
অল্প-বয়সে চুল-পাকার-কারণ
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জানতে অনেকে অনেক বেশি আগ্রহী। তাই আপনাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি আশা করি এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

সূচিপত্র ঃ অল্প বয়সে চুল পাকার কারন

অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ

অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ অনেক রয়েছে এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো বংশগত সমস্যা। জেনেটিক বা বংশগত কারণে অনেক দ্রুত অনেকের চুল পেকে যায়। আবার হরমোনগত সমস্যার কারণে অনেকের চুল খুব তাড়াতাড়ি পেকে যায়। আবার হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যার কারণে অনেকে খুব দ্রুত চুল পেকে যায়। মানসিক কষ্ট,মানসিক চাপ, হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে অনেকের অনেক দ্রুত চুল পেকে যায়।
এছাড়াও সঠিক পুষ্টি ও ভিটামিনের অভাবে খুব দ্রুত চুল পেকে যায়। ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম,ফোলেট এবং ভিটামিন ডি এর অভাবে চুল পাকে। আবার অতিরিক্ত রাসায়নিক জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে খুব দ্রুত চুল পেকে যায় এবং চুল পড়ে যায়। ভেজাল খাবার, পরিবেশ দূষণ এবং খারাপ পানির কারণে চুল দ্রুত পেকে যায়।

অল্প বয়সে চুল পাকার অন্যতম কারণগুলো হলো। 
  • বংশগত কারণ
  • মানসিক অবসাদ
  • দুশ্চিন্তা,অনিদ্রা
  • ওষুধের প্রতিক্রিয়া
  • হরমোনগত সমস্যা
  • পরিবেশ ও আবহাওয়া জনিত সমস্যা
  • পানি খারাপ হলে
  • ভিটামিনের অভাব
  • পুষ্টির অভাব
  • অতিরিক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার

কোন বয়সে চুল পাকা স্বাভাবিক

চুল পাকার সাধারণত একটা নির্দিষ্ট  বয়স আছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে চুল পাকার আদর্শ বয়স হল ৩৫ বছর। এই বয়সে যে কোন মানুষের চুল পেকে যেতে পারে এটি কোন সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয় না। তবে ৩০ বছর বয়সের আগে যাদের চুল পেকে যায় তাদের বিভিন্ন কারণ থাকে । আর এ ধরনের সমস্যাকে অকালপক্ক বলা হয় যা একপ্রকার শারীরিক অসুস্থতা অথবা হরমোনগত বা পরিবেশ ও আবহাওয়া গত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। 
তবে এরকম সমস্যা দেখা দিলে আপনি যদি অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর অবস্থার শিকার হন তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী ঘরোয়া কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতে পারেন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। বর্তমানে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন অনেকেই হচ্ছে। তাই আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

চুল পাকা প্রতিরোধের উপায়

চুল পাকা প্রতিরোধের কিছু উপায় রয়েছে। ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি চুল পাকা প্রতিরোধ করতে পারেন। আপনাদের সাথে ঘরোয়া কিছু উপায় শেয়ার করব যাতে আপনারা চুলপাকা রোধ করতে পারেন।

নারিকেল তেল ও লেবু ঃ নারিকেল তেল চুলের জন্য অনেক পুষ্টিকর এবং উপকারী। নারিকেল তেলের সাথে লেবু মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে তা অকালপক্কতা রোধ করতে সাহায্য করে। আপনি এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে খুব দ্রুত এর ফলাফল পাবেন বলে আশা করা যায়।

আমলকি ঃ চুলের যত্নে আমরা অনেকেই আমলকি ব্যবহার করে থাকি। আমলকির রস বের করে তার সাথে লেবু মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে অকালপক্ক তার পাশাপাশি চুলের খুশকি দূর হয়। চুল সুস্থ এবং মজবুত থাকে। আমলকির গুড়া বা রস লেবুর সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন গোসলের 30 মিনিট পূর্বে চুলে মিশিয়ে মেসেজ করতে পারেন এতে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

পেঁয়াজ ঃ চুল পাকা রোধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে পেঁয়াজ অনেক কার্যকরী। পেঁয়াজ বেটে তার রস মাথায় মেসেজ করলে আপনার পাকা চুলের সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। হাতের কাছে থাকা এই উপকরণ দিয়ে আপনি আপনার চুলের যত্ন নিতে পারেন।

তিল ও বাদাম ঃ তিলের বীজ ও বাদাম তেল চুলের জন্য অনেক উপকারী। বাদাম তেল ও তিলের বীজ পেস্ট করে মাথায় লাগিয়ে রাখুন ২০ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল পাকা বন্ধ হবে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। 

গাজর ঃ গাজরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা কম বেশি অনেকেই জানি। প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের জুস খেলে এটি যেমন চুল পাকা রোধ করতে সাহায্য করে তেমন শরীরকে সুস্থ রাখতে ও সাহায্য করে।

চুল পাকা একটি সাধারন সমস্যা হলেও এ প্রতিরোধ করার জন্য কিছু উপায় আমরা অবলম্বন করতে পারি। যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। যেমন-
নারিকেল তেল ও লেবুর রস মাথায় মেসেজ করা।
  • পেঁয়াজ বাটা ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মাথায় মেসেজ করা।
  • শরীরের যত্নে ভিটামিন ও মিনারেল এর ব্যবহার।
  • আমলাকি ও লেবুর রস ব্যবহার করুন।
  • তিলের বীজ ও বাদাম তেল মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন।
  • মৌসুমী ফল ও প্রচুর সবুজ হলুদ শাকসবজি গ্রহণ করুন।
  • মনকে প্রফুল্ল রাখুন মানুষের চাপ ও টেনশন মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
  • বিভিন্ন রোগ জনিত সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

চুল পাকা দূর করতে কি কি করবেন?

চুল পাকা দূর করতে আমরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। নিজেকে সুস্থ সুরক্ষিত রাখতে এবং চুল পাকা রোগ করতে আমরা নিম্নলিখিত কাজগুলো নিয়মিত করতে পারি। যেমন-
  • নিয়মিত চুল আঁচরাতে হবে যাতে চুলের গোড়ায় পুষ্টি পায়।
  • প্রতিদিন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পানি দিয়ে গোসল করুন।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বা যে কোন রকমের প্রসাধনী,তেল ব্যবহার বন্ধ করুন।
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপমুক্ত থাকা চেষ্টা করুন।
  • প্রতিদিন কিছু সময় এক্সারসাইজ করা। এতে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা কাজ করে।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করুন।
  • মাদকদ্রব্য ও অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য সেবল পরিহার করুন।
  • প্রয়োজনে চিকিৎসাতে পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন বি ১২ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।

চুল পাকা বন্ধ করার তেল

বিভিন্ন রকম ব্যস্ততার কারণে আমরা ঠিকমতো শরীরের চুলের যত্ন নিতে পারি না। সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার অভাবে আমরা চুলগুলোকে হারিয়ে ফেলি এবং অনেক সময় খুব দ্রুত চুল পেকে যাওয়া শুরু হয়। তাই চুলের পরিচর্যায় কিছু তেল ব্যবহার করতে পারি যা চুল পাকা রোধ করতে সাহায্য করে। যেমন-সরিষার তেল, নারিকেল তেল এবং অলিভ অয়েল আমরা চুলে ব্যবহার করতে পারি।

সরিষার তেল পাকা রোধ করতে সাহায্য করে। সরিষার তেলের সাথে মেথি এবং এবং কারি পাতা মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। একইভাবে অলিভ অয়েলস এর সাথে মেথি গুড়া ভিজিয়ে রেখে সেই তেল ব্যবহার করলে চুলপাকা রোধ করা সম্ভব হয় পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

চুল পাকা রোধের ঘরোয়া উপায়

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা চুল পাকার কারণ এবং চুলপাকা রোধে কিছু উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। চুল পাতার রোধের ঘরোয়া উপায় গুলো এক নজরে জেনে নেই।
  • চুলের যত্নে নারিকেল তেল ও লেবু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারি।
  • আমলকি ও লেবু ব্যবহার করতে পারি।
  • পেঁয়াজ বাটা চুলে ব্যবহার করতে পারি।
  • গাজর এর রস খেলে চুল পাকা প্রতিরোধ হয়।
  • প্রয়োজনীয় ভিটামিন গ্রহণ করতে পারি।
  • তিল ও বাদামের তেল ব্যবহার করতে পারি।
  • অতিরিক্ত টেনশন এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা।

চুল পাকা প্রতিরোধের কৌশল

চুল পাকা প্রতিরোধের কৌশল হিসেবে আপনি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছু খাবার যোগ করতে পারেন পাশাপাশি চুলের যত্নে কিছু ব্যবহার করতে পারেন। যেমন-
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
  • বেশি বেশি মৌসুমী ফল ও শাকসবজি ফল।
  • স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পানিতে গোসল করুন।
  • চুলের পুষ্টি অনুযায়ী সঠিক তেল নির্বাচন করুন।
  • মানসিকভাবে সুস্থ এবং স্বাভাবিক ও টেনশন মুক্ত থাকুন।
  • অ্যালকোহল জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন।
  • ফাস্টফুড এবং অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করুন।

শেষ কথা ঃ অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ

অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ সম্পর্কে আপনাদের উপরোক্ত আলোচনায় বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি আশা করি এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। এরকম আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন এবং পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url