গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে যারা জানতে চেয়েছেন আজকের এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য। প্রাচীন কাল থেকে এই থানকুনি পাতা ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এই গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়।
গর্ভাবস্থায়-থানকুনি-পাতার-উপকারিতা
শরীরের বিভিন্ন রোগ সারাতে এই গাছ ভেষজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ, এটি খাওয়ার নিয়ম , এবং এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সূচিপত্র ঃ গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক রয়েছে। থানকুনি পাতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর আর অন্যান্য দেশে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এটি ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শারীরিক সুস্থতা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা অতি জরুরী। গর্ভাবস্থায় একজন মাকে অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হতে হয়। তাই খাবারের ক্ষেত্রেও অনেক বেশি সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য থানকুনি পাতার উপকারিতা নিচে দেওয়া হল-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ঃ থানকুনি পাতায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল,আন্টি ইনফ্লুমেটরি জাতীয় উপাদান থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থায় যেকোনো রকমের সংক্রমণ রোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ঃ থানকুনি পাতা মস্তিষ্কের রস পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এটি কার্যকরী। এছাড়াও এটি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।

হজমে সাহায্য ঃ থানকুনি পাতা বদহজম, গ্যাস, এবং পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি পাকস্থলী এবং অন্তরের কার্যক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। যাদের হজমে সমস্যা হয় তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকরী।

ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়াতে ঃ থানকুনি পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ইমিউনিটি সিস্টেম বানাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিভাইরাল জাতীয় উপাদান শরীর সুস্থ রাখে।

ত্বকের সুরক্ষায় ঃ থানকুনি পাতা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। ত্বকের বয়সের ছাপ এবং বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা অ্যান্টি এজিং ত্বকের যাবতীয় সমস্যা, চর্মরোগ এবং এলার্জি জাতীয় সমস্যা ব্রণ ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঃ গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম হলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ। একজন গর্ভবতী নারীর যেকোনো সময় রক্তচাপ কম বেশি হতে পারে সে ক্ষেত্রে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকরী। এটি বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক উপকারী।

ক্ষত নিরাময় ঃ থানকুনি পাতা ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ইনফ্লুমেটরি উপাদান যে কোনো ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের যে কোন প্রদাহ কমাতে এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও এটি অনিদ্রা, অবসাদ এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক উপকারী। থানকুনি পাতা চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

থানকুনি পাতার বৈশিষ্ট্য

থানকুনি পাতা প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি একটি ঔষধি গাছ যা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর আরো বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন রোগ সারাতে এবং ওষুধ হিসাবে এটির ব্যবহার করা হয়। থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
থানকুনি পাতা সাধারণত আমাদের বাড়ির আশেপাশে ঝোপে ঝারে এবং পুকুর পাড়ে বিশেষ করে ভেজা স্যাথস্যাথে জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। এটি খুবই ছোট এবং গোলাকার জাতীয় পাতা। এটি সবুজ রঙের এবং দেখতে লতানো গাছের মতো হয়ে থাকে। গায়ে এর গায়ে লম্বা শিরের মত দাগ থাকে কিন্তু কোন কাটা থাকে না। এটি খেতে হালকা তিতা স্বাদের।

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম 

থানকুনি পাতা সারাবছর কমবেশি পাওয়া যায় কিন্তু বর্ষাকালে এর চাহিদা বেশি। আমরা অনেক ভাবেই থানকুনি পাতা খেতে পারি। চাইলে এটিকে রান্না করে সবজির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় আবার আপনি চাইলে বিভিন্ন সালাদ এ ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার অনেকে থানকুনি পাতা জুস করে খায়। তবে পেটের যাবতীয় সমস্যায় থানকুনি পাতা খেতে চাইলে তার কাঁচা অবস্থায় খাওয়া উত্তম।

এজন্য প্রথমে কিছু থানকুনি পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে ব্লেন্ডারে দিয়ে জুস করে নিন। এতে এক চামচ লেবুর রস এবং এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পান করুন। এতে শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং পেটে যাবতীয় সমস্যা দূর হবে। আর আপনি যদি এভাবে খেতে না পারেন তাহলে বিভিন্ন খাবারের সাথে পরিবেশন করতে পারেন।

থানকুনি পাতার কয়েকটি উপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক। থানকুনি পাতা যেহেতু একটি ভেজষ উদ্ভিদ সেহেতু এটি আমাদের জন্য অনেক উপকারী। নিচে থানকুনি পাতার কয়েকটি উপকারিতা দেওয়া হল।
  • পেটে যাবতীয় সমস্যা দূর করতে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে
  • বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়ে
  • বিভিন্ন ব্যথা উপশম করতে
  • সর্দি কাশি জনিত সমস্যা দূর করতে
  • ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়
  • মানসিক অবসাদ দূর করতে

থানকুনি পাতা ব্যবহারের উপায়

থানকুনি পাতা ব্যবহারের কিছু উপায় রয়েছে। যেমন-
চা হিসেবে ঃ থানকুনি পাতা পানির সাথে ফুটিয়ে চা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
রস করে ঃ থানকুনি পাতার রস জুস হিসেবে খাওয়া যায়
পাউডার হিসেবে ঃ থানকুনি পাতা শুকিয়ে পাউডার করে তারপরে পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
ক্রিম হিসেবে ঃ ত্বকের সুরক্ষায় থানকুনি পাতা পেস্ট করে ব্যবহার করা যায়।
রান্না করে ঃ থানকুনি পাতা ভাজি করে এবং বিভিন্ন সবজির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতা

থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি কোলাজেন বাড়িয়ে দেয় যা বয়সে ছাপ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বক দাগমুক্ত এবং টানটান থাকে। এছাড়াও এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে দেয় ফলে ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও এন্টিইনফ্লুমেটারি থাকায় ত্বকের যাবতীয় সমস্যা এবং লালচে ভাব দূর করে।
এছাড়াও এটি ভেষজ উদ্ভিদ হওয়ার কারণে এটি শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে এবং অবসাদ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কার্যকরী বিশেষ করে যারা বয়সের কারণে অনেক কিছু মনে রাখতে পারেন না তাদের জন্য স্মৃতিশক্তি বাড়াতে থানকুনি পাতার রস অনেক বেশি উপকারী।

থানকুনি পাতার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

যে কোন জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক রয়েছে তবুও এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো হল-
  • অতিরিক্ত পরিমাণে থানকুনি পাতা খেলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা যাবে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
  • এলার্জিজনিত সমস্যা থাকলে অবশ্যই সতর্কতার সাথে গ্রহণ করুন।
  • যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হন কারণ এটি উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে প্রথম তিন মাস এটি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় তাই ডায়াবেটিস রোগীরা খাওয়ার আগে সতর্কতার সাথে গ্রহণ করুন প্রয়োজনের চিকিৎসাকে পরামর্শ গ্রহণ করুন।

শেষ কথা ঃ গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। আশা করি এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। এটি একটি অন্যতম কার্যকরী ভেষজ উদ্ভিদ। তাই এটি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

গর্ভাবস্থায় খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকুন এবং পরিমিত পরিমাণে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। জানার থাকলে আমাকে কমেন্ট করে জানান এবং আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url