সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে ম্যাজিক এর মত তা আমাদের শরীরের কাজ করবে। গবেষণায় জানা গেছে কাঁচা হলুদে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লুমেটারি উপাদান রয়েছে। তাই সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে নানারকম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সকালে-খালি-পেটে-কাঁচা-হলুদের-উপকারিতা
যুগ যুগ ধরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাঁচা হলুদ এর ব্যবহার চলে আসছে। হলুদের আরও একটি বিশেষ গুণ হলো এটি এক প্রকার ওষুধ হিসেবে কাজ করে। সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবআমার এই আর্টিকেলে।

সূচিপত্র ঃ সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদের উপকারিতা

সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদের উপকারিতা

সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল টি। হলুদ মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও হলুদের আরও একটি পরিচয় হলো এটি একটি ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হলুদ মসলা হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করা হয় কিন্তু সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হলো।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ঃ কাঁচা হলুদ প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এজন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রাচীনকাল থেকে কাঁচা হলুদের প্রচলন চলে আসছে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি রেডিকেল কোষগুলোর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত হলুদ মেশানো পানি পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং শরীর সুস্থ থাকে।

রক্তে শর্করা রা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ঃ সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এছাড়াও ইন্সুলিন সংবেদনশীলতার উপর হলুদের ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

প্রদাহ কমায় ঃ কাঁচা হলুদের মধ্যে করকিউমিন নামক একটি বায়োএকটিভ যৌগ রয়েছে যা বিভিন্ন প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং অসুস্থতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে আথ্রাইটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য হলুদ অনেক উপকারী। এতে কারকিউমিন নামক উপাদান থাকায় জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

রোগ জীবাণু ধ্বংস করে ঃ এতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁত কে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে এবং দাঁতের মাড়ি মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ জীবাণুর ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

আয়রনের ঘাটতি দূর করে ঃ হলুদে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তারা সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হলুদ মেশানো পানি খেলে রক্তের আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ঃ গবেষণায় জানা গেছে হলুদে ঢাকা কারকিউমিন নামক উপাদান মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক নামক হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং স্নায়ুকোষ কে  করতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ঃ হলুদে এমন কিছু এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সার কোষ এর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষের বৃদ্ধি হওয়া বন্ধ কর। এই প্রাণহাতি রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে গেলে নিয়মিত কাঁচা হলুদ গ্রহণ করুন।

হৃদযন্ত্র উন্নত ঃ বর্তমানে ছোট বড় সকলেই হার্টের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। আপনার হাতের কাছে থাকা কাঁচা হলুদ হতে পারে আপনার এসব সমস্যার সমাধান। কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদান হার্টের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ সেবন করুন এতে আপনার হার্ট সুস্থ থাকবে।

শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ দূর করতে ঃ আমাদের শরীরে নানা রকম ক্ষতিকর পদার্থ থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়। এই পদার্থগুলো শরীর থেকে বের হতে না পারলে তা আমাদের শরীরে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে এক টুকরা কাঁচা হলদ শরীরে থাকা ফ্রী রেডিক্যাল নিউট্রিলাইজ করে।

কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন বিভিন্ন উপায়ে কাঁচা হলুদ খাওয়া যেতে পারে। তবে কাঁচা হলুদ খাওয়ার সঠিক নিয়ম হলো সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে সেবন করা। গবেষকরা জানিয়েছেন কাঁচা হলুদ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে তার শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারি। এছাড়াও আপনি কাঁচা হলুদ ও মধু একসাথে খেতে পারেন। আবার আপনি চাইলে কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে পারেন।
অনেকে মনে করেন পানির সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে অনেক বেশি উপকার হয়। যদিও এটির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি তবে আপনি চাইলে কাঁচা হলুদ ব্লেন্ড করে তারপর দুধের সাথে মিশিয়ে মধু দিয়ে খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা হলুদ গ্রহণ করলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে কারণ কাঁচা হলুদে কার কিউমিন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

দিনে কি পরিমান কাঁচা হলুদ খাওয়া যাবে

অবশ্যই কাঁচা হলুদ খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে কোন জিনিসই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে না। দিনে এক থেকে দুই গ্রামের বেশি কাঁচা হলুদ খাওয়া ঠিক না। তবে যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে না খাওয়াই উত্তম। অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা হলুদ হজমে সমস্যা এবং ডায়রিয়া জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যারা ঔষধ হিসেবে এবং সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা দেখে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেতে চাইছেন তারা কাঁচা হলুদ গ্রহণ করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সুষম খাদ্যাভ্যাস এর পাশাপাশি পরিমিত পরিমাণে কাঁচা হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে কোন কিছু গ্রহণ করা ঠিক হবে না তাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন। এতে আপনি পর্যাপ্ত উপকার পাবেন।

কাঁচা হলুদের ব্যবহার

যুগ যুগ ধরে কাঁচা হলুদ এর ব্যবহার বেড়ে চলেছে। নিম্নলিখিত কারণ সমূহের জন্য কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা যায়। যেমন-
  • রক্ত পরিষ্কার রাখতে কাঁচা হলুদের রস গ্রহণ করুন।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কাঁচা হলুদ ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
  • যাদের মাথায় খুশকি রয়েছে কাঁচা হলুদ খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
  • জ্বর সর্দি সহজ শারীরিক অসুস্থতায় কাঁচা হলুদ অ্যান্টিবায়োটিক এর কাজ করে।
  • কাঁচা হলুদ ব্যবহারে মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা হয়।
  • শরীরের অতিরিক্ত মেদ গুলি ও কোলেস্টেরল কমাতে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা হয়।
  • এলার্জি দূর করতে  কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা হয়।
  • অনিদ্রা এবং দুশ্চিন্তা দূর করতে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা হয়।
  • বিভিন্ন ক্ষত নিরাময় করতে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা হয়।
  • শরীরের মেদ ভুড়ি কমাতে এবং কোলেস্টেরল কমাতে কাঁচা হল ব্যবহৃত হয়।

ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদ

আমরা কমবেশি সবাই রূপচর্চা করি। নিজের ত্বককে সুন্দর এবং গ্লো দেখাতে সবাই পছন্দ করি। কাঁচা হলুদ ত্বকের রং ফর্সা করতে এবং ত্বকে বিভিন্ন রকমের দাগ ছোপ কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ খাওয়ার পাশাপাশি যদি কাঁচা হলুদ পেস্ট করে ব্যবহার করা যায় তাহলে ত্বক আরো পরিষ্কার ও উজ্জ্বল থাকে।

সপ্তাহে দুদিন অথবা তিন দিন কাঁচা হলুদ প্রেস করে সামান্য বেসন আর কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে তিরিশ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন। এটি আপনার ত্বকের ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে এবং ত্বক ভেতর থেকে ফর্সা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা এবং ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদ বেশ কার্যকরি।

কাঁচা হলুদ খেলে কি কি উপকার হয়

কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকার গুলো হল-
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • রোগ জীবাণু ধ্বংস করে
  • ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে
  • হৃদ যন্ত্র সুস্থ রাখে
  • সর্দি কাশি দূর করে
  • প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে
  • ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে
  • হাড় জোড়া করতে সাহায্য করে
  • দাঁতের ক্ষয় রোধ করে
  • অন্ত্রের গতি উন্নত করে
  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
  • মানসিক চাপ ও স্ট্রেস কমায়
  • হজম ক্ষমতা বাড়ায়

কাঁচা হলুদ ও মধুর উপকারিতা

কাঁচা হলুদ এবং মধু উভয়ই অ্যান্টিসেকটিভ এবং এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। কাঁচা হলুদ আর মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে তার শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। সর্দি কাশি জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যেকোনো প্রদাহ কমাতে ও সর্দি কাশি জনিত সমস্যায় দিনে দুই থেকে তিনবার কাঁচা হলুদ ও মরু মিশিয়ে সেবন করুন।

মন্তব্য ঃ সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদের উপকারিতা

সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। আশা করি এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। খালি পেটে কাঁচা হলুদ এর উপকারিতা, এর ব্যবহার সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনেছি। তবে কাঁচা হলুদ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা হলুদ বিভিন্ন ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তাই কাঁচা হলুদ ঔষধ হিসেবে সেবন করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।লিখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন আরো নতুন কিছু জানার জন্য আমাদের কমেন্ট করে জানান। আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url