তুলসি পাতার কয়েকটি উপকারিতা ও অপকারিতা
তুলসী পাতার কয়েকটি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে প্রায় কম বেশি সবারই জানা আছে। কিন্তু এই তুলসী পাতা খেলে কি উপকার হয় এবং কিভাবে এটি খাওয়া উচিত এটি সবারই প্রায় অজানা। তুলসী পাতার গুনাগুনের জন্য এটিকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
তুলসি পাতায় রয়েছে অ্যাান্টি অক্সিডেন্ট,যা মারাত্মক সব রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে।বিশেষজ্ঞদের মতে,প্রতিদিন একটি করে তুলসি পাতা চিবিয়ে খেলে অনেক রকম রোগের মুক্তি মেলে।চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
- তুলসি পাতার উপকারিতা
- তুলসি পাতা খাওয়ার নিয়ম
- খালি পেটে তুলসি পাতা খাওয়ার উপকারিতা
- ওষুধ হিসেবে তুলসি পাতার ব্যবহার
- চুলের যত্নে তুলসি পাতার ব্যবহার
- ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার
- মধু ও তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
- সর্দি কাশিতে তুলসী পাতার ব্যবহার
- প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তুলসী পাতার ব্যবহার
- পেটের সমস্যায় তুলসী পাতার ব্যবহার
- ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী পাতার গুরুত্ব
- ওজন কমাতে তুলসী পাতার ব্যবহার
- তুলসি পাতার চা এর উপকারিতা
- তুলসী পাতার ক্ষতিকর কিছু দিক
- লেখকের শেষ কথা
তুলসী পাতার কয়েকটি উপকারিতা ও অপকারিতা
তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।তুলসী পাতায় রয়েছে এন্টিইনফ্লেমেটারি উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যার ফলে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগের মতো জটিল অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।তুলসীপাতায় ইউক্যালিপটাস নামক এক ধরনের উপাদান থাকায় শরীরের বিভিন্ন রকমের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও তুলসী পাতা কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য করে।তুলসীপাতায় মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় একটি দাঁত সুরক্ষায় কাজ করে।যাদের মাথাব্যথার সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন এই পাতা খেলে মাথাব্যথা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
তুলসী পাতায় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। যা ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে। যাদের অ্যালার্জি, চুলকানি এসব আছে তারা এই পাতা নিয়মিত খেলে খুব ভালো ফলাফল পাবেন।তুলসী পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যার ফলে এটি মুখের বিভিন্ন রকমের দাগ ছোপ কমাতে সাহায্য করে।
যাদের হজম শক্তি কম বা খাবার হজম করতে বিভিন্ন রকম সমস্যা হয় বা পেটের সমস্যা হয় তারা নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে আশা করি খুব ভালো ফলাফল পাবেন।যাদের বমি বমি ভাব হয় তারা তুলসী পাতা খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।তুলসী পাতা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে পেটে যাবতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের পেট ব্যথা আছে তারা এটি খেলে খুব উপকার পাবেন।
ওজন কমাতে তুলসী পাতা খুব ভালো কাজ করে।তুলসী পাতা রক্তে সুগার এবং কোলেস্টেরল দুটির মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াওডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, কিডনি সুরক্ষায় এর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে এটি রক্ত জমাট বাধা দূর হতে সাহায্য করে। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গলা ব্যথায় তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় তুলসী পাতা খেলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।কিছু পানিতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা দূর হয়। এছাড়াও তুলসী পাতা পানিতে গরম করে মধু দিয়ে খেলে জ্বর ও ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।।
খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
যারা শরীরের বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তুলসী পাতার রস গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি মেটাবলিজম বাড়িয়ে দিয়ে মেদভুরি কমাতে সাহায্য করে।খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে এটি শরীরে বিভিন্ন রকমের টক্সিন উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে।যার ফলে ত্বক এবং চুল ভালো থাকে।
আরও পড়ুনঃ চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
অনেকে বিভিন্ন রকম এলার্জি চুলকানি জনিত সমস্যায় ভুগছেন। তারা সকালে খালি পেটে গরম পানি তুলসী পাতার রস আর মধু মিশিয়ে খেলে খুব ভালো ফলাফল পাবেন।তুলসি পাতার রস মুখে থাকলে মুখের যাবতীয় ঘা,ইনফেকশন দূর হয়।এছাড়াও মুখের দূগন্ধ দূর করতে তুলসি পাতার রস বেশ কার্যকরী।
তুলসী পাতার কয়েকটি ব্যবহার
তুলসী পাতাকে চাইলে বিভিন্নভাবে খাবারের সাথে পরিবেশন করা যায়। বিভিন্ন দেশে এটি জুস বিভিন্ন সালাদ এবং রান্নায় ব্যবহার করা হয়।আবার চাইলে প্রতিদিন দু একটি করে পাতা খালি মুখে খাওয়া যায়।চা হিসেবে ও এটি প্রতিদিন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
তুলসী পাতা মশা তাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে
রক্ষা করে। আপনি যদি মশা মাছি এবং বিভিন্ন পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে চান
তাহলে বাসায় এই পাতা রাখতে পারেন। আপনি চাইলে বাসায় ছোট্ট একটি টবে এই গাছ
লাগিয়ে রাখতে পারেন।
তুলসী পাতা বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে, রক্তে কোলেস্টেরল কমা্তে, শরীরের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।তুলসি পাতা আর চন্দন একসাথে বেটে কপালে লাগিয়ে রাখলে মাথা ব্যাথা দূর হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী পাতার ব্যবহার
ক্যান্সার একটি মরণঘাতী অসুখ। এই অসুখ থেকে নিরাময় পেতে তুলসী পাতা বেশ কার্যকরী। তুলসী পাতায় রয়েছে রেডিও প্রটেকটিভ উপাদান যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। অগ্নাশয়ে যে টিউমার দেখা যায় সেটি ধ্বংস করতে তুলসী পাতা দারুন উপকারি। এতে আরো রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল জাতীয় উপাদান যা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
সর্দি কাশি রোধে তুলসী পাতার ব্যবহার
ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার
ব্রণের সমস্যা দূর করেঃ তুলসী পাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুখের
বিভিন্ন দাগ যেমন ব্রণ, মেছতা এসব কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। পাতা বেটে
নিয়ে টক দই আর মধু মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া
যায়। তাছাড়াও এটি মুখ পরিষ্কার করতে এবং সফট রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাজিনা পাতার গুরুত্ব
ত্বকের দাগ কমাতেঃতুলসী পাতা ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব এবং লালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় থাকা আন্টি ইনফ্লুমেটারি উপাদান ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রোদে পোড়া দাগ দূর করতে তুলসী পাতা কার্যকরী।তুলসি পাতা ত্বকের মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
চুলের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার
চুল কালো ও ঝলমলে করতেঃ তুলসী পাতা, মেহেদী পাতা একসাথে পেস্ট করে মাথায় লাগিয়ে রেখে ৩০ মিনিট পর পরিষ্কার করলে চুল খুব ঝলমলে হয়। চুলের আগা ফাটা থেকে চুলকে রক্ষা করে।
মাথার খুশকি দূর করতেঃ তুলসী পাতার পেস্ট মাথায় লাগিয়ে রাখলে এটি খুশকি দূর
করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চাঁদের মাথায় উকুনের উপদ্রব আছে তারা খুব ভালো ফলাফল
পাবেন।
চুল পড়া বন্ধ করতেঃ তুলসী পাতা চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতার রস
তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং চুল পড়া রোধ
পাবে।
ওজন কমাতে তুলসী পাতার ব্যবহার
তুলসী পাতা রক্তে সুগার এবং কোলেস্টেরল দুটির মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে
খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা
গেছে তুলসী দিয়ে তৈরি ২৫০ মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেট প্রতিদিন খেলে ওবেসিটি
ও লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে অবশ্যই যে কোন ঔষধ সেবনের পূর্বে
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে হবে।
তুলসী চা' এর উপকারিতা
তুলসী পাতার চা খাওয়ার ফলে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
এছাড়াও এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতার চা রক্তে গ্লুকোজ এবং
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।তাই প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে ২দিন চেষ্টা করবো এই চা পান করতে।এছাড়াও শুধু তুলসি পাতা মুখে চিবিয়ে খেলেও খুব ভালো ফলাফল পাবেন।
তুলসী পাতার অপকারিতা
সামান্য পরিমাণে তুলসী পাতা খাওয়া ক্ষতিকর নয় বরং আরো উপকারী কিন্তু এটা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে তার শরীরে বিভিন্ন রকম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসী পাতা নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানের সময় তুলসী পাতা এড়িয়ে চলাই উত্তম।
তুলসী পাতা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে ব্যাহত করে এবং
রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে পারে। যার ফলে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত রক্তপাতের মত
সমস্যা। তাই যে কোন সার্জারির দুই সপ্তাহ পূর্ব থেকে এটি খাওয়া বন্ধ করে দিতে
হবে।
তুলসী পাতায় থাকে অতিরিক্ত পরিমাণে পটাশিয়াম যার ফলে নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। তাই কারো নিম্ন রক্তচাপ থাকলে এটি না খাওয়াই উত্তম।তাই আমাদের উচিত সঠিক উপায়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া। উল্লিখিত কারণ ছাড়া অন্যান্য উপকারের জন্য তুলসী পাতা খেলে খুব উপকার পাওয়া যায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url