কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ এবং ১০ টি উপকারিতা
কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। তাদের জন্য
আজকের এই লিখাটি। কাঁঠালের যেমন উপকার রয়েছে পাশাপাশি কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে
অনেক রকম পুষ্টি উপাদান এবং এটি খেতেও অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে।
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। কাঁঠাল খেতে অনেকেই পছন্দ করেন না কিন্তু কাঁঠালের বিচি
অনেক পছন্দ করেন। বিভিন্নভাবে কাঁঠালের বিচি খাওয়া যায়। কাঁঠালের বিচি পুষ্টিগুণ
ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব আমার এই আর্টিকেলের
মাধ্যমে।
সূচিপত্র ঃ কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি ও কাঁঠালের বিচি খেতে
চাইবেন। কাঁঠাল অনেকে পছন্দ না করলেও কাঁঠালের বিচি অনেকেই পছন্দ করেন। এটি শুকনো
অবস্থায় ভেজে খাওয়া যায় আবার বিভিন্ন তরকারির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে অনেক রকম পুষ্টি উপাদান। এক গবেষণায় বলা হয়েছে কাঁঠালের
বিচিতে প্রোটিন সহ বিভিন্ন পুষ্টিগুণ যা আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে
সাহায্য করে।
আরো পড়ুন ঃ সজনে ডাটার পুষ্টিগুণ উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রোটিন, রিবোফ্লাবিন ও থায়ামিন, কার্বোহাইড্রেট
এবং আঁশ। কাঁঠালের বিচিতে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী উপাদান রয়েছে।এছাড়াও কাঠালের বিচি
খেলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়। যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে তারা কাঁঠালের বিচি
খেলে অনেক উপকার পাবেন। এছাড়াও কাঁঠালের বিচিতে ভিটামিন এ রয়েছে যার
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।আবার কাঠালের বিচি খেলে খারাপ কোলেস্টেরল দূর
হয়।
কাঁঠালের বিচিতে যেসব উপাদান রয়েছে
কাঁঠালের পাশাপাশি কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান।কাঁঠালের বিচিতে
রয়েছে প্রোটিন,ফাইবার ও আশ।এতে
রয়েছে স্টার্চ,প্রোটিন,ভিটামিন,মিনারেল,অ্যাান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়াও এতে
রয়েছে ক্যালশিয়াম,পটাশিয়াম,জিঙ্ক,ম্যাঙ্গানিজ,আয়রন এবং কপার।প্রতি ১০০ গ্রাম
কাঁঠালের বিচিতে পাওয়া যায়-
- শক্তি ৯৮ ক্যালরি
- কার্বোহাইড্রেট ৩৮.৪ গ্রাম
- প্রোটিন ৬৬ গ্রাম
- ফাইবার ১.৫ গ্রাম
- চর্বি ০.৪ গ্রাম
- আয়রন ১.২ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৪.২ মিলিগ্রাম
এছাড়াও এতে ক্যালশিয়াম,ফসফরাস,ফসফরাস এর মতো গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রিবোফ্লাবিন ও থায়ামিন। যা
শরীরে শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি হৃদ যন্ত্র, মস্তিষ্ক, অন্ত্র ও মাংসপেশির
রক্ষণাবেক্ষণ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা অন্ত্রে থাকা
ব্যাকটেরিয়া দের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ফাইবার ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ করে,
এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
কাঁঠালের বিচি সংরক্ষণ পদ্ধতি
কাঁঠাল যেহেতু বছরের এক সময় পাওয়া যায় সেও তো সারা বছর ধরে কাঁঠালের বিচি খেতে
গেলে এটিকে সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া কাঁঠালের বিচি পাওয়া
যায় না। তাই কাঁঠাল খাওয়ার পরে বিচি গুলোকে পানি দিয়ে ধুয়ে হালকা একটু রোদে
শুকিয়ে শুকনো করে নিন। এই বিচি আপনি বিভিন্নভাবে খাবারের সাথে পরিবেশন করতে
পারেন। আগের দিনের মানুষ কাঁঠালের বিচি শুকিয়ে বালির মধ্যে চাপা দিয়ে রেখে দিত
যাতে অনেকদিন শুষ্ক অবস্থায় এটি সংরক্ষণ করতে পারে। আপনি চাইলে এই পদ্ধতি অনুসরণ
করতে পারেন।
আবার আপনি চাইলে অন্য উপায়ে কাঁঠালের বিচি সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে
পারেন।বিচিগুলোকে অনেকদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।
আবার বিচিগুলোকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে খোসা ছাড়িয়ে গরম পানিতে হালকা
সিদ্ধ করে নামিয়ে নিন। এখন এই বিচিগুলোকে পরিষ্কার করে এয়ারটাইট বক্সে করে
ফ্রিজে রেখে দিয়ে সারা বছর খেতে পারবেন।
কাঁঠালের বিচির ১০ টি উপকারিতা
কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জানলেও কাঁঠালের ভিত্তিক উপকারিতা সম্পর্কে কেমন
জানি না। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে অনেক রকম পুষ্টি উপাদান। নিচে
কাঁঠালের বিচি উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
আরো পড়ুন ঃ মুখের ভেতরের ঘা দূর করার কার্যকরী উপায়
- কাঁঠালের বিচিতে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী উপাদান রয়েছে। যা বিভিন্ন রোগ এর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- কাঁঠালের বিচি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করে।
- কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন যা পেশি শক্ত করতে সাহায্য করে।
- কাঁঠালের বিচি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়।
- কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে থায়ামিন এবং রিভোফ্লাবিন রয়েছে। যা হৃৎযন্ত্র, মাংসপেশি ও মস্তিষ্কের রক্ষণাবেক্ষণ করে।
- কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যাাসকারবিক এবং গ্যালিক এসিড রয়েছে যা আমাদের শরীরকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
- কাঁঠালের বিচি বদহজম দূর করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
- কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে ভিটামিন এ যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। কাঁঠালের বিচি পেস্ট করে তবে লাগিয়ে রাখলে ত্বকে বয়সের ছাপ এবং বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
- কাঁঠালের বিচিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন রয়েছে। যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
কাঁঠালের বিচি খেলে কি ওজন কমে
অনেকেই মনে করতে পারেন কাঁঠালের বিচিকে প্রচুর ফ্যাট থাকায় এটি ওজন
বাড়ায়। কিন্তু না কাঁঠালের বিচি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কাঁঠালের বিচিতে থাকা
ফাইবার এবং প্রোটিন ওজন কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার ক্ষুধা কমিয়ে দেয়, এবং
ক্ষুধা নিবারণ করে। অনেকক্ষণ পর্যন্ত শরীরের শক্তি যোগান দেয়। যার কারণে আমাদের
ক্ষুধা পায় না এবং আমরা খেতে চাই না। তাই বলা চলে কাঁঠালের বিচি খেলে পেট ভর্তি
থাকে অনেক সময় পর্যন্ত যা আমাদের অতিরিক্ত খাওয়ার হাত থেকে বিরত
রাখে।
কাঁঠালের বিচি খাওয়ার নিয়ম
অনেকেই নানাভাবে কাঁঠালের বিচি খেয়ে থাকেন। কাঁঠাল খাওয়ার পরে এই বিচি ফেলে না
দিয়ে আপনিও কাঁঠালের বিচি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন ও সংরক্ষণ করতে পারেন।
কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে
থাকলে আপনিও কাঁঠালের বিচির সঠিক ব্যবহার করবেন। আপনি চাইলে কাঁঠালের
বিচি ভেজে গরম গরম খেতে পারেন এটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মজাদার।
আবার কাঁঠালের বিচি বিভিন্ন তরকারির সাথে ব্যবহার করতে পারেন। কাঁঠালের বিচির
ভর্তা অনেক সুস্বাদু এবং মজাদার। আবার এটি দিয়ে বানানো যায় মিষ্টি হালুয়া।
কাঁঠালের বিচির হালুয়া অনেক সুস্বাদু এবং মজাদার হয়ে থাকে। অনেকেই বিভিন্নভাবে
রান্নায় ব্যবহার করে থাকেন এই কাঁঠালের বিচি। আপনি এই সিজনে কাঁঠালের বিচি
সংরক্ষণ করে সারা বছর সেটি খেতে পারবেন।
কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা
কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ফল যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হজম ক্ষমতা উন্নত করে হৃদরোগে ঝুঁকি কমায় শর্করার
মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কাঁঠাল খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা নিচে
দেওয়া হল-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
- হজম শক্তি উন্নতিকরন
- হৃদরোগের ঝুকি কমায়
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
- হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
- দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
- ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
- শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে
কাদের কাঁঠালের বিচি খাওয়া উচিত না
কাঁঠালের বিচি সকলের জন্যই নিরাপদ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা
উচিত। যেমন-
যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা সতর্কতার সাথে কাঁঠালের বিচি গ্রহণ করুন।
- অনেকের পেটের সমস্যা থাকলে কাঁঠালের বিচি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আবার কাঁচা কাঁঠালের বিচি হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই কাঁঠালের বিচি খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে রান্না করে নিন।
- অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- কাঁচা কাঁঠালের বিচি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ কাঁচা বিচিতে ক্যানিং ও ট্রিপসিন নামক উপাদান রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়ার বিঘ্ন ঘটায়।
- কিছু কিছু ঔষধ খাওয়ার সময় কাঁঠালের বিচি না খাওয়াই উচিত। যারা রক্ত পাতলা করার ঔষধ খান তারা কাঁঠালের বিচি খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়
শেষ কথা ঃ কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনেছি উপরের
আলোচনার মাধ্যমে। আশা করি আপনারা খুব ভালোভাবে এর গুনাগুন ও খাওয়ার নিয়ম
সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। তাই এই সিজনে এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কাঁঠালের বিচি ফেলে না
দিয়ে আপনিও তা বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খেতে পারেন।
কাঁঠালের মৌসুম শেষ হলে ও এর বিচি অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। আপনি চাইলে
কাঁঠালের রীতি সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন এবং তা রান্না করে খেতে পারেন।
আমার এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে বিস্তারিত সবকিছু সুন্দরভাবে তুলে ধরার চেষ্টা
করেছি আশা করি এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।এরকম আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের
সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url