গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে কি করনীয় জেনে নিন

গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে করণীয় কি তা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন অসতর্কতার কারণে এরকম ঘটনা প্রায় ঘটে থাকে। অনেক সময় এটি খুব সাধারণ পোড়া থেকে খুব জটিলতম এবং যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি হয়।
গরম-পানিতে-হাত-পুড়ে-গেলে-করণীয়-কি
গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে সঠিক সময়ে এর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অনেক সময় জটিল এবং মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হয়। তাই আজকের এই ব্লগে আপনাদের সাথে আলোচনা করব গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে  করনীয় কি এবং কিভাবে এ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

সূচিপত্র ঃ গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে করণীয় কি

গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে করণীয় কি

অনেক সময় অসতর্কতা থেকে এরকম দুর্ঘটনা আমাদের সাথে প্রায়ই ঘটে। অনেক সময় একটি ছোট আকারে থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেডিকেলের ভাষায় একে স্কেল বার্ন বলা হয়। গরম পানিতে পোড়া বা আগুনে পোড়া যেই হোক না কেন বাইরে থেকে দেখতে মারাত্মক না হইলেও ভিতরে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে বসে না থেকে খুবই দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
বেশিরভাগ রান্নার সময় অসতর্কতা, অতিরিক্ত গরম পানি,গরম তেল থেকে হাত পা বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পুড়ে যেতে পারে। গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে সাথে সাথে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরবর্তীতে ক্ষতির সম্ভবনা আরো বেড়ে যেতে পারে। হাত পা পুড়ে গেলে প্রথমে পোড়ায় স্থানটি ঠান্ডা পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখুন। এরপর প্রয়োজনে ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। আবার যদি পোড়াটি মারাত্মক হয় তাহলে চিকিৎসকে পরামর্শ গ্রহণ করুন খুব দ্রুত।

হাত পোড়ার কয়েকটি ধরন বা প্রকারভেদ 

হাত পা পোড়ার গভীরতার উপর ভিত্তি করে এটিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এক ডিগ্রি বার্ন ঃ এটি সাধারণত ত্বকের পুড়ে যাওয়াকে নির্দেশ করে। এ ধরনের পোড়ায় ত্বকে লালচে ভাব দেখা দেয়, জ্বালাপোড়া করে এবং হালকা ফুলে যায়। অনেক সময় আগুনের পাশে কাজ করলে এবং গরম পানি বা তেল পড়লে এ ধরনের পোড়া লক্ষ্য করা যায়।

দুই ডিগ্রি বার্ন ঃ এই ধরনের পোড়া এক ডিগ্রি বার্ন এর থেকে একটু মারাত্মক। এ ধরনের পোড়ায় ত্বকের উপরের স্তরের পাশাপাশি ভেতরের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পোড়া স্থানগুলো লাল হয়ে যায়, ফুসকুনি পড়ে এবং প্রচন্ড জ্বালাপোড়া দেখা দেয়।

তিন ডিগ্রি বার্ন ঃ এই ধরনের বার্ন হলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এতে সাধারণত ত্বকের উপরিভাগের দুই স্তরেই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাশাপাশি ভেতরের মাংসপেশী, রক্তনালী এবং স্নায়ু আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থান প্রচন্ড ব্যথা করে এবং শক্ত ও কালো হয়ে যায়। এ ধরনের বার্ন সাধারণত ফুটন্ত গরম পানি পড়লে, আগুনে জ্বলন্ত শিখায় বা বিদ্যুৎতায়িতো হলে হয়ে থাকে।

হাত পোড়ার ঘরোয়া প্রতিকার

গরম পানিতে বা আগুনে হাত পুড়ে গেলে আমরা প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে দ্রুত কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারি। নিচে ঘরোয়া ভাবে এর প্রতিকার গুলো উল্লেখ করা হলো-

ঠান্ডা পানি ব্যবহার ঃ গরম পানিতে বা আগুনে হাত পুড়ে গেলে আপনার প্রথম পদক্ষেপ হবে ঠান্ডা পানিতে হাত ডুবিয়ে রাখা। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পোড়া স্থানটি পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ক্ষতস্থান খুব দ্রুত শীতল হয়ে যায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় পাশাপাশি ব্যথা কম হয়। কারণ ঠান্ডা পানি ত্বকের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

মধু ঃ মধু প্রাকৃতিক এন্টিসেপটিক ও এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। ক্ষতস্থানে মধু লাগিয়ে দিলে এটি ত্বকের সংক্রমনের ঝুঁকি কমায় এবং ক্ষতস্থানের জ্বালা ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

অ্যালোভেরা ঃ গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে করণীয় এই পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে অ্যালোভেরা।এলোভেরা খুবই ঠান্ডা প্রকৃতির এটি ত্বকের শীতলতা বজায় রাখে। তাই পোড়া স্থানে এলোভেরা জেল লাগিয়ে দিলে ক্ষতস্থান দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায় এবং সংক্রমনে ঝুঁকি কমায়।

কাঁচা আলু ঃ হতবা পুরা স্থানে কাঁচা আলু পিষে পেস্ট করে লাগিয়ে দিলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। এতে ক্ষতস্থান দ্রুত শীতল হয়ে যায় এবং সংক্রমনে ঝুঁকি কমায়।
নারিকেল তেল ঃ ক্ষতস্থান বা পোড়া স্থানে সাথে সাথে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। নারিকেল তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে এবং ক্ষত নিরাময়ের সাহায্য করে। এছাড়াও নারিকেল তেল ক্ষতস্থান আদ্র এবং সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।

টি ব্যাগ ঃ ব্যথা কমাতে এবং আক্রান্ত স্থান শীতল রাখতে টিব্যাগ খুব ভালো কাজ করে। ২০ থেকে  ৩০ মিনিটের জন্য একটি টি ব্যাগ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিন। এতে খুব দ্রুত আরাম পাবেন।

পোড়া থেকে প্রতিরোধের উপায়

যেকোনো পোড়া থেকে প্রতিরোধ পেতে গেলে অবশ্যই সর্তকতা থাকতে হবে। রান্না করার সময় চুলার তাপ গরম পানি এবং গরম তেল থেকে খুব সাবধান থাকতে হবে। এসব জায়গা থেকে ছোট বাচ্চাদের দূরে রাখতে হবে। এছাড়াও গরম পানি এবং গরম খাবার থেকে শিশুদের দূরে রাখুন। বাসায় সব সময় অ্যান্টিসেপটিভ মলম, ব্যান্ডেজ এবং বার্নার ক্রিম রাখুন। যা পুড়ে যাওয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন। প্রথম স্তরের বার্ন আপনি ঘরে বসেই খুব সহজে এর সমাধান দিতে পারেন।

গরম পানিতে পুড়ে যাওয়া প্রতিরোধের উপায়

পুড়ে যাওয়া স্থানে বরফ ও ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের ক্ষতি বাড়ে না এবং আক্রান্ত স্থান শীতল ও ঠান্ডা থাকে যা জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা করে। আবার বরফ ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেয় যা গরমে পোড়া বা আগুনে পোড়া সংক্রমণকে বাড়তে দেয় না। আমরা অনেক সময় ভয়ে ও আতঙ্কে আক্রান্ত স্থানে তেল ব্যবহার করি। এটি ব্যবহার থেকে অবশ্য বিরত থাকতে হবে কারণ তেল ত্বকের উপর আলাদা স্তর তৈরি করে পোড়া স্থানের ক্ষতি বাড়ায়। আবার এর ফলে সংক্রমনে ঝুঁকি ও বাড়ে।

গরম পানিতে পা পুড়ে গেলে কি করনীয়

গরম পানিতে পা পুড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি যার ফলে খুব দ্রুত জ্বালাপোড়া ভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এবং বাড়িতে ঘরোয়া ভাবে যদি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি তাহলে এর দ্রুত সংক্রমণ থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমরা এর সংক্রমণ থেকে এবং ক্ষতির হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পেতে পারি।

প্রথমেই পোড়া স্থানটিকে ঠান্ডা পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখবো। আবার চাইলে বরফ কুচি বা বরফ আক্রান্ত স্থানটিতে লাগাতে পারবো। ক্ষত বা পোড়া স্থানে এলোভেরা জেল, মধু বা আলুর রস দিয়ে রাখলে খুব দ্রুত জ্বালাপোড়া ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আবার আক্রান্ত স্থানটি শীতল ও ঠান্ডা হয়ে যায় এবং সংক্রমনে ঝুকিয়ে অনেকটাই কম হয়।

হাত পুড়ে গেলে কি মলম ব্যবহার করতে হবে

গরম পানিতে বা আগুনের হালকা হাত পুড়ে গেলে আমরা প্রাথমিকভাবে বাড়িতে কিছু ঘরোয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। এর পাশাপাশি বাজারে বিভিন্ন ধরনের বার্না ক্রিম পাওয়া যায় সেসব ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখলে জ্বালাপোড়া কম হয় এবং সংক্রমনে ঝুঁকি কমে যায়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন সেখানে কোন তৈলাক্ত জাতীয় কিছু ব্যবহার করবেন না এতে ত্বকের উপরে পাতলা স্তর পড়ে যা সংক্রমণকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

কখন একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন

পুড়ে যাওয়া স্থানের প্রাথমিক চিকিৎসা ও ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করার পরেও যদি অনেক জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা থাকে তাহলে বাসায় বসে না থেকে খুব দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। আবার খেয়াল করুন পোড়া স্থানে যদি লালচে ভাব এবং খোলা ভাব একদিনের মধ্যে না কমে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

মন্তব্য ঃ গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে করণীয় কি

গরম পানিতে হাত পুড়ে গেলে করণীয় কি এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম উপরের আলোচনার মাধ্যমে। গরম পানিতে হাত পা পুড়ে গেলে বসে না থেকে তাৎক্ষণিক তার চিকিৎসা নেওয়া অতি জরুরী। ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করার পরেও সমস্যা বেশি হলে বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাহলে খুব দ্রুতই এর মারাত্মক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এরকম আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url