জাম খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
জাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সকলেই জানি।গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে
জাম অন্যতম। জাম যেমন খেতে মজাদার তেমন পুষ্টিকর এটি দেহের বিভিন্ন চাহিদা
পূরণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
যারা জামের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তাদের জন্য আজকের এই
আর্টিকেলটি। জামের উপকারিতা ও অপকারিতা, জামের বিচি উপকারিতা সম্পর্কে এই
আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সূচিপত্রঃ জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- জাম খাওয়ার উপকারিতা
- জাম খাওয়ার অপকারিতা
- জামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত
- জাম খাওয়ার নিয়ম
- জামের বীজের উপকারিতা
- জামের বিচির অপকারিতা
- জাম গাছের ছালের উপকারিতা
- জাম গাছের পাতার উপকারিতা
- শেষ কথাঃ জামের উপকারিতা ও অপকারিতা
জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
দেশীয় ফলের মধ্যে জাম অনেক পুষ্টিকর ও উপকারি একটি ফল।। জামের বৈজ্ঞানিক নাম হল
Syzygium Cumini জাম বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও
ভারত,পাকিস্তান,শ্রিলংকা ও ইন্দোনেশিয়া তে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের মধ্যে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলের
প্রচুর পরিমাণে জাম চাষ করা হয়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জাম খাওয়ার
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ বিটরুট খেলে মিলবে অবিশ্বাস্য ১০ টি উপকার
জাম খাওয়ার উপকারিতা
১। জামে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম রয়েছে যা হৃদস্পন্দন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও জাম হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
২। জামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ফ্রি রেডিকেল কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়াও জামে সায়ানিডিন নামক এক ধরনের নির্যাস পাওয়া যায় যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
৩। জামে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন গঠনে সহায়তা করে যার ফলে ত্বক সুস্থ সুন্দর এবং উজ্জ্বল থাকে।
৪। জামে রয়েছে জিংক এবং ভিটামিন সি যা শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা থেকে সমাধান দেয়। এছাড়াও জাম হাঁপানির উপসর্গ জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
৫। জামে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম হাড় মজবুত করতে এবং দাঁতের গঠন শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
৬। সিগারেটের ভেতর থাকার রাসায়নিক পদার্থ ফুসফুস কে ক্ষতিগ্রস্ত করে জাম এই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিতে সাহায্য করে।
৭। পলিফেনল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ চাঁদ যে কোন ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।আবার যাদের খাবারের রুচি নেই তারা জাম খেলে মুখের রুচি বৃদ্ধি পায়।
৮। জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। যা খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং আয়রনের ঘাটতি কমে যায়।
৯। জামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করে এবং হজমে সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও পেট ফাঁপা জাতীয় সমস্যা থাকলে তা থেকে মুক্তি দিতে পারে এই জাম। এছাড়াও জাম কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডাইরিয়া জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
১০। নিয়মিত জাম খেলে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের মুখে দুর্গন্ধ আছে তারা জাম খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
জাম খাওয়ার অপকারিতা
জাম অনেক গুষ্টিকারী এবং উপকারী একটি ফল। জাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। জাম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির
পাশাপাশি সার ও দাঁত মধু করতে সাহায্য করে। পেট ফাঁপা বদহজম জাতীয় সমস্যা দূর
করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের মতো রোগ এর কোষ ধ্বংস করতে বেশ
কার্যকরী। জামের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবুও
কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাম হওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এলার্জি জাতীয়
সমস্যা দেখা দিলে অতিরিক্ত জাম খাওয়া পরিহার করতে হবে।
জাম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে। খালি পেটে জাম
খাওয়া যাবে না এতে এসিডিটির পরিমাণ বেড়ে যাবে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা
দাম খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। জাম খাওয়ার পরে দুধ না খাওয়াই
উত্তম। জামের তেমন কোন অপকারিতা নেই বললেই চলে। জাম সহ জামের পাতা,জামের
ছাল, জামের বিচি এমনকি জামের পাতা ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
জামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত
জাম অনেক উপকারী এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। জামের প্রচুর পরিমাণে আইরন
রয়েছে যা রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও জমে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ,বি,সি সহ প্রয়োজনীয়
পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং মিনারেলস। জামে উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম থাকে যা
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ রসুন খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
জামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি। যা ত্বক এবং চোখের জন্য অনেক উপকারী। জাম
খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায়। জামে উপস্থিত অক্সালিক
এসিড, ম্যালিক এসিড, গ্যালিড এসিড ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও জামে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি থাকায় আমাদের ইমিউনিস্ট সিস্টেম অনেক
শক্তিশালী থাকে।
জাম খাওয়ার নিয়ম
জাম একটি সহজলভ্য দেশীয় সুস্বাদু টক মিষ্টি জাতীয় ফল। জাম খেলে মিলবে অনেক
রকমের স্বাস্থ্য উপকারিতা। পুষ্টিবিদরা সঠিক নিয়মে জাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে
থাকেন। দিনের যে কোন সময় জাম খাওয়া যায় তবে খালি পেটে জাম না খাওয়াই
ভালো। চলুন জাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।
১। খালি পেটে জাম খেলে বদহজম, গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সকাল বা দুপুরের মাঝামাঝি সময় জাম খেলে তা স্বাস্থ্য উপকারী।
২। দুধ খাওয়ার পরপরই অথবা দুটো জাতীয় জিনিসের সাথে জাম খাওয়া যাবেনা। এতে এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩। দৈনিক 100 থেকে 150 গ্রাম জাম আমাদের জন্য অনেক স্বাস্থ্য উপকারী। তবে এর বেশি খেলে কিছুটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪। জাম খাওয়ার পরপরই পানি খাওয়া যাবে না কমপক্ষে ৩০ মিনিট পরে পানি পান করুন।
জামের বীজের উপকারিতা
জামের অনেক পুষ্টিগুন এবং উপকারিতা রয়েছে।তবে জামের বিচিতে ও রয়েছে অনেক পুষ্টিকর উপাদান।জামের বিচির কয়েকটি উপকারিতা তুলে ধরা হল
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনঃ জামের বিচি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে।জামের বিচি গুড়া করে ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নিন।নিয়মিত কয়েকদিন খেলে এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রনেঃ যে কোন সময় শরীরের ওজন দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। জামের বিচি শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে জামের
বিচি কার্যকরী।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ যারা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা
জামের বিচি খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
পেটের সমস্যাঃ পেটে যাবতীয় সমস্যা যেমন- পেট ফাঁপা, বদহজম,
কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
লিভার সুরক্ষায়ঃ জামের বিচি লিভারের বিভিন্ন রকম প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। জামের মধ্যে থাকা এন্টি-ইনফ্লেমোটারি লিভারের সুরক্ষায় কাজ করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
জামের বিচির অপকারিতা
জামের বিচি উপকারিতা অনেক বেশি সেই তুলনায় এর অপকারিতা নাই বললেই চলে। জামের বীজ পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, এছাড়াও এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। জামের বীজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কার্যকরী। তাই বলা চলে এর অপকারিতা একদমই নাই।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে জামের বিচি খাওয়া ঠিক না। যদি
সম্ভব হয় একজন ভাল বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে গ্রামের বিচি খেতে পারেন।জামে ম্যালিক
এসিড,অক্সালিক এসিড রয়েছে যা আমাদের জন্য ওষুধ হিসেবে কাজ করে।কারো রক্ত পায়খানা
হলে জাম গাছ এর ছাল রস করে খেলে পায়খানা বন্ধ হয়।
জাম গাছের ছালের উপকারিতা
জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেই সাথে জামের বিচি খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। জামের উপকারিতা সম্পর্কে জানলেও জাম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। তাদের জন্য এই লেখা। শুধু জাম না জামের পাতা, বাকল, বিজ এসব ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
জাম গাছের ছাল অনেক উপকারি।জাম গাছের ছাল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।দাঁত দিয়ে রক্ত পড়লে জাম গাছের ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। দাঁত এ যদি কালো দাগ হয় তাহলে সপ্তাহে ২ দিন জাম গাছের ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত এর কালো দাগ দূর হয়। শরীরের কোথাও কোনো ক্ষত দেখা দেয় তাহলে জাম গাছের রস ক্ষত স্থানে দিলে খুব তাড়াতাড়ি ক্ষত নিরাময় হয়।
জাম গাছের পাতার উপকারিতা
জাম যেমন উপকারী তেমন চামের ছাল বাকল এমনকি জাম গাছের পাতা অনেক উপকারী। বিভিন্ন
রোগ সারাতে ওষুধ হিসেবে জাম গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়। আলসার এবং ডায়রিয়াজনিত
সমস্যায় জাম গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে
জাম গাছের পাতা বেশ কার্যকরী। জাম গাছের পাতা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
এছাড়াও জাম গাছের পাতা আমাশয় জাতীয় রোগ দূর করে জামের পাতা পেটের যাবতীয়
সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী। জ্বর হ্রাস করতে জামের পাতা ব্যবহার করা হয়।
উপরোক্ত আলোচনা প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে জাম এমন একটা ফল যা অনেক
পুষ্টিকর এবং উপকারী পাশাপাশি জামের পাতা, জামের বিচি, জাম গাছের ছাল ওষুধ
হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
শেষ কথাঃ জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের
বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি এটি আপনাদের খুব উপকারে আসবে। আপনারা এই
আর্টিকেলের মাধ্যমে জামের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা এবং জামের বিচি,জামের ছাল,জামের
পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার কয়েকটি কার্যকরী উপকারিতা
আশা করি জাম সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্ত কিছু আপনারা আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।আমার এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের পাশেই থাকুন। আরও কোন তথ্য জানা থাকলে আমাকে কমেন্ট করে জানান।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url