ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার কয়েকটি কার্যকরী উপকারিতা

ইসবগুলের ভুসি সম্পর্কে, এর পুষ্টিগুণ এবং এটি খাওয়ার এসব খাওয়ার উপকারিতা আমরা কম-বেশি সবাই জানি। ইসবগুলের ভুষিতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। আমরা মনে করি ইসবগুলের ভুষি শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে কিন্তু এটি আরো অনেক রোগের জন্য কার্যকরী।

ইসবগুলের-ভুসি-খাওয়ার-কয়েকটি-কার্যকরী-উপকারিতা

আমরা সবাই ইসবগুলের খুশির সাথে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত আছে যে রাতে পানিতে ইসুবগুল ভিজিয়ে রেখে সকালে তা পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ আরো যাবতীয় রোগের মুক্তি মেলে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ইসবগুলের ভুষির গুনাগুন,খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

সূচিপত্রঃ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা

আমরা মনে করি ইসবগুলের ভুষি শুধুমাত্র কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে কিন্তু এটি প্রায় আরও ৮/১০ টি রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। সকালে খালি পেটে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার অভ্যাস কয়েকটি রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী। নিচে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো। চলুন সেসব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ পাইলস রোগের অন্যতম চিকিৎসা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা। চিকিৎসকরা পাইলস রোগীদের সারা বছর ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ইসবগুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এক চামচ ইসবগুলের ভুষি এক কাপ পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে সকালে অথবা রাতে ঘুমানোর পূর্বে খেয়ে নিন। এদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে।

আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার কয়েকটি কার্যকারী উপকারিতা

অতিরিক্ত ওজন কমাতেঃ ইসবগুলের ভুষি অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে হালকা কুসুম গরম পানিতে ইসবগুলের ভুষি এক চামচ মিশিয়ে সেখানে এক চামচ লেবুর রস দিন। ভাত খাওয়ার পূর্বে এটি খেয়ে নিন এটি খেলে ক্ষুধা কম লাগবে এবং দ্রুত ওজন কমবে। তবে ওজন কমানোর জন্য অবশ্যই কুসুম গরম পানি এবং লেবুর রস ব্যবহার করবেন।

শারীরিক দুর্বলতা দূর করতেঃ আমরা প্রায়ই শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করি। শারীরিক দুর্বলতা এড়াতে রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক কাপ দুধের সাথে এক চামচ ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেয়ে নিন।এছাড়াও এটি হাত-পা জ্বালাপোড়া এবং মাথা ঘোরার মত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেন যৌন ক্ষমতা বাড়াতে ইসবগুলের ভুষি কার্যকরী। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ ইসুবগুল মিশিয়ে খেলে যৌন ক্ষমতা বাড়ে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ হজম শক্তি জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুষি পাকস্থলীর গাত্র থেকে হজম সহায়ক এনজাইম সংশ্লেষণ করে। আমাদের বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাসের কারণে হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুষি হতে পারে উত্তম সমাধান। এছাড়াও ইসবগুলের ভুষি পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

ইসবগুলের-ভুসি-খাওয়ার-কয়েকটি-কার্যকরী-উপকারিতা

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণঃ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম হলো কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ। ইসবগুলের ভুষি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এটি রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইড এর পরিমাণ কমিয়ে দেয় যা হৃদরোগে ঝুঁকি হতে আমাদের রক্ষা করে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধঃ চিকিৎসকদের মতে ডায়রিয়া এবং আমাশয় এর রোগ জীবাণু ধ্বংস করতে কার্যকরী। দিনে দুইবার ইসবগুলের ভুষি খেলে ডায়রিয়া উপশম হয়। ইসবগুল আলসারজনিত পেট ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে এটি প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ ইসবগুলের ভুষিতে রয়েছে জিলেটিন নামক এক ধরনের উপাদান যা গ্লুকোজের শোষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করে এবং রক্তে সুগার লেভেল বাড়াতে দেয় না। এর ফলে ডায়াবেটিসহ উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

অম্লতা দূর করেঃ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূরীকরণ।গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুষি বেশ কার্যকরী। এটি হজম শক্তি ঠিক রাখতে শরীরের বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে ভূমিকা রাখে। ইসবগুলের ভুষি পাকস্থলীতে একটি দেয়াল তৈরি করতে সাহায্য করে যা অম্লতা সহ পাকস্থলীর যাবতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

আমাশয় থেকে রক্ষাঃ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ইসবগুল আমাশয় রোগের জীবাণু ধ্বংস করতে পারেনা কিন্তু আমার শরীর জীবাণু পেট থেকে মনের মাধ্যমে বের করে দিতে পারে।

প্রসাবের জ্বালাপোড়া দূর করতেঃ যারা প্রসবের জ্বালাপোড়ায় ভুগছেন তারা ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন। এই সমস্যা দূর করতে আখের গুড়ের সাথে ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেলে দ্রুত সমাধান মিলে। এটি সকালে এবং রাতে খেতে পারেন।৮ থেকে ১০ দিন নিয়মিত খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

ইসবগুলের ভুসি কি

ইসবগুলের ভুষির সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত থাকলেও এর পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অজানা। পুষ্টিবিদরা বলেছেন ইসবগুলের ভুষির বহু উপকারিতা রয়েছে কিন্তু সকালে খালি পেটে খাওয়ার কার্যকারিতা আরো অনেক বেশি। ইসবগুলের ভুসি একপ্রকার দ্রবণীয় ফাইবার যা নিজের খোসা থেকে পাওয়া যায়। যা ল্যাকজেটিভ হিসাবে পরিচিত।

ইসবগুল হল এক ধরনের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল পেতে পাঁচ থেকে ছয় মাসের মতো সময় লাগে। এই ফল এর খোসা ইসবগুলের খুশি হিসেবে পরিচিত যা খুবই পিচ্ছিল জাতীয় হয়ে থাকে। ইসবগুলের ভুষি আমাদের দেহের সকল ধরনের টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুষি আমাদের দেহের হৃদপিণ্ড, হার্ট ভালো রাখতে কার্যকরী।

ইসবগুলের ভুষির পুষ্টিগুণ

ইসবগুলের ভুসি সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশি জানি কিন্তু এর সঠিক পুষ্টিগুণ সম্পর্কে এবং উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো জানিনা। বিশেষজ্ঞদের মতে ইসবগুলের ভুসি অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। ইসবগুলের ভুষিতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, শর্করা এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। এটি ভারতের গুজরাট রাজ্যে বেশি চাষ করা হয়। এক টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসিতে রয়েছে ৫৩ পার্সেন্ট ক্যালরি,১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, জিরো পার্সেন্ট ফ্যাট, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা,0.৯ মিলিগ্রাম আয়রন যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সকলেই জানি কিন্তু এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আমরা জানিনা তবে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।এটি কখনোই দীর্ঘক্ষন পানিতে ভিজিয়ে রাখা যাবে না। আগে আমাদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল আমরা অনেক সময় এটি পানিতে ভিজিয়ে রাখতাম এমনকি রাতে ভিজিয়ে সকালে খেতাম এটি একদমই ঠিক না। দীর্ঘ সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর কার্যকারিতায় এবং গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাজিনা পাতার উপকারিতা

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১। পানির সাথে ১ চামুচ ইসবগুল মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।

২। দই এর সাথে ইসবগুল মিশিয়ে খেতে পারবেন।

৩। ইসবগুল এর সাথে মধু আর লেবুর রস মিশিয়ে খেলে দ্রুত ওজন কমে।

৪। হাল্কা কুসুম গরম পানিতে ১ চামুচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়।

৫। আখের রসের সাথে মিশিয়ে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।

৬। প্রতিদিন রাতে এক কাপ দুধের সাথে এক চামচ ইসবগুল মিশিয়ে খেতে পারেন।

তবে ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে নিয়ম মেনে খেতে হবে। এটি দীর্ঘ সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এটি যেমন ঘন হয়ে যায় তেমন এর গুণাবলী নষ্ট হয়ে যায়। পানিতে ভিজিয়ে রাখার সর্বোত্তম সময় হলো ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

কখন ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে না

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা অনেক থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি সাবধানতার সাথে খাওয়া উচিত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এটি একটানা কয়েক মাস ধরে খাওয়া ঠিক না।

১। যারা ডায়াবেটিস রোগী তারা অবশ্যই চিনি বা মধু ছাড়া ইসবগুলের ভুসি খাবেন।

২। এলার্জি জাতীয় রোগীর ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা প্রকোট থাকলে এটি না খাওয়াই উত্তম।

৩। কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুষি খাওয়া এড়িয়ে চলায় উত্তম।

৪। যারা অতিরিক্ত পাতলা বা স্থূলতায় ভুগছেন তাদের ইসুবগুলির ভুসি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।

৫। ইসবগুলের ভুষি রক্তচাপ কমায় তাই যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদেরকে সাবধানতার সাথে খেতে হবে।

ইসবগুলের-ভুসি-খাওয়ার-কয়েকটি-কার্যকরী-উপকারিতা

৬। ঘুমানোর ঠিক আগ মুহূর্তে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়া ঠিক না।

৭। মাংসপেশীর দুর্বলতা জনিত রোগ থাকলে ইসুবগুলের ভুসি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।

৮। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ইসবগুলের ভুষি খান তারা খেয়াল করবেন মলত্যাগের অভ্যাস ও ধরন এর কোন পরিবর্তন হচ্ছে কিনা। কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন অথবা ইসবগুলের ভুসি খাওয়া বন্ধ করে দিবেন।

৯। পায়ুপথ দিয়ে রক্ত যায় বা বায়ু পথের অন্যান্য কোন জটিল রোগ হলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

১০। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ইসবগুলের ভুষি একটানা দীর্ঘদিন খাওয়া উচিত না কারণ এতে ডায়রিয়া সহ অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

১১। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যায় ভুগছেন তারা একটানা পাঁচ দিন খাওয়ার পরে যদি অবস্থান উন্নতি না হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেই এবং খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নিন।

উপসংহারঃ ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। ইসবগুলের ঘুসি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সহজলভ্য এবং ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও আরো অনেক রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া কার্যকরী উপায়

ইসবগুলের  ভুসি খাওয়ার সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সঠিক নিয়মে ইসবগুলের ভুসি খেলে শারীরিক সুস্থতা এবং সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব। আমার এই পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন আর কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। নতুন নতুন আরো তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url