তোকমা দানা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

তোকমা দানা খাওয়ার উপকারিতা আমরা অনেকেই জানি কিন্তু এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানি না। এটি মূলত পানিয় ও শরবত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই আর্টিকেলে তোকমা দানা খাওয়ার উপকারিতা ও  অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তোকমা-দানা-খাওয়ার-উপকারিতা
বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তোকমা দানা ব্যবহার করা হয়। এতে আয়রন,ফাইবার,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মত খনিজ উপাদান রয়েছে। এটি অনেক ছোট আকারের শশ্য দানার মত হলেও এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।

সূচিপত্র ঃ তোকমা দানা খাওয়ার উপকারিতা

তোকমা দানা খাওয়ার উপকারিতা

তোকমা মূলত ছোট এক ধরনের বীজ যা দেখতে কালো রঙের হয়ে থাকে। এটি মূলত শরবত বা পানীয় তে ব্যবহার করা হয়। এতে ফাইবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি এসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি খাওয়ার কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তোকমা দানা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো-
ওজন কমাতে ঃ ওজোন কমাতে তোকমা দানা ম্যাজিক এর মত কাজ করে। এতে থাকা ওমেগা ৩ ফাটি এসিড দেহের জন্য অনেক উপকারী। তোকমা দানায় প্রচুর ফাইবার এবং আঁশ রয়েছে যা ক্ষুধা নিবারণ করে এবং অনেকক্ষণ পর্যন্ত শরীরের শক্তি যোগায়। এটি ওজন কমানোর পাশাপাশি হার্ট ব্লক হওয়া থেকে রক্ষা করে।

এসিডিটি দূর করে ঃ তোকমা দানা এসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে তোকমা দানা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তিরিশ মিনিট পরে সেই পানি পান করুন। ক্ষতিকর পদার্থ দূর হয়ে যাবে। এবং পাকস্থলীর এসিডিটি ভাব কমাবে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ঃ তোকমা দানা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রট যা গ্লুকোজের রূপান্তরিত হয়। যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস রয়েছে তারা নিয়মিত তোকমা দানা খেলে খুব ভালো ফলাফল পাবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ঃ তোকমা দানা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত সকালে এক চামচ তোকমা দানা এবং এক চামচ ইসুবগুল পানিতে মিশিয়ে খেলে খুব ভালো রেজাল্ট পাবেন। পাশাপাশি এটি হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

দেহের তাপ কমায় ঃ অতিরিক্ত গরমে দেহের তাপ কমাতে সাহায্য করে তোকমা দানা। এটি শরবত হিসেবে খাওয়ার সময় ব্যবহার করা হয়। গরমের দিনে এক গ্লাস তোকমা দানার শরবত যেন শরীরকে নিমিষেই ঠান্ডা করে দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঃ তোকমা দানা ফ্লাভনয়েড এবং ফেনোলিক উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং হার্ট ভালো রাখে।

ত্বকের সুস্থতা রক্ষায় ঃ ত্বকের নানা রকম যাবতীয় সমস্যায় তোকমা দানা ব্যবহার করা হয়। যাদের চর্মরোগ জাতীয় সমস্যা রয়েছে তারা তোকমা দানা দূর করে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। পাশাপাশি সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খেতে পারেন।

হজমে সাহায্য করে ঃ তোকমা দানায় প্রচুর ফাইবার থাকায় এটি হজম ক্ষমতার উন্নত করে এবং গ্যাস্ট্রিক এবং আলসারের মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে ঃ শরীরের যে কোন জায়গায় ব্যথা বা প্রদাহ হলে তোকমা দানার শরবত প্রদাহ বিরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও তো তোমাদের রয়েছে অ্যান্টিফাইরিটিক উপাদান যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং জ্বর ও ঠান্ডা কাশি সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও তোকমা দানা মুখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। চুলে যাবতীয় সমস্যা দূর করে। এতে প্রচুর পুষ্টি ভিটামিন রয়েছে এবং এটি মিরারেল সমৃদ্ধ খাবার হয় এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তাই প্রতিটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে তোকমা দানা বহুল পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি শস্য বীজ।

তোকমা দানা কি

তোকমা দানা মূলত এক ধরনের বীজ যা কালো রঙের এবং ছোট ছোট আকৃতি হয়ে থাকে। এটি মূলত পৃথিবীর সব দেশেই পাওয়া যায়। এরা আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় ক্রান্তীয় অঞ্চলে। এর গাছ সাধারণত দুই থেকে তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং এর প্রস্থচ্ছেদ বর্গাকার। এর কিনারা গুলো মূলত খাচকাটা  টাইপের হয়ে থাকে।
এর পাতা থেকে খুব বাজে এবং একপ্রকার গন্ধ বের হয়। এবং এর ফুল গোলাপি বা বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। কিছু কিছু তোকমা দানা কালো হয় আবার কিছু কিছু তো মজা না হালকা বাদামি রঙের হয়ে থাকে। বিভিন্ন পুষ্টিবিদ এবং স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্য তোকমা দানা একটি রেগুলার খাবার। যা অনেকে সকালে খালি পেটে নিয়মিত পান করে আসেন।

তোকমা দানার পুষ্টিগুণ

তোকমা দানা প্রচুর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। তোকমা দানায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট রয়েছে। পাশাপাশি ফ্যাটি এসিড এবং ওমেগা ৩ এর ভালো উৎস হচ্ছে তোকমা দানা। এছাড়াও এতে রয়েছে
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
  • আয়রন
  • ফ্যাটি এসিড
  • পটাশিয়াম
  • ক্যালসিয়াম
  • ম্যাঙ্গানিজ
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ভিটামিন সি

তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপনি তোকমা দানা যোগ করতে পারেন। এটি দিনে যে কোন সময় খাওয়া যায়।
  • প্রতিদিন সকালে অথবা রাতে তোকমা দানার শরবত খেতে পারেন। তবে এই শরবত খাওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে তা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • বিভিন্ন শরবতের সাথে বা জুস এর সাথে এক চামচ তোকমা দানা মিশিয়ে তা খেতে পারেন এতে ক্লান্তি দূর হবে এবং শরীর ঠান্ডা ও সতেজ থাকবে।
  • তোকমা দানা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে খান এতে দ্রুত ওজন কমবে।
  • যে কোন অবস্থাতেই তোকমা দানা খান না কেন তা অবশ্যই ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন তা না হলে এর কার্যকারিতা বা ফলাফল পাবেন না।

ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার নিয়ম

তোকমা দানা এবং ইসবগুল উভয়ই অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন সকালে এক চামচ তোকমা দানা ও এক চামচ ইসবগুল পানিতে ভিজিয়ে রেখে চল্লিশ মিনিট পরে তা পান করুন। এতে আপনার পেটে যাবতীয় সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য বদহজম দূর হয়ে যাবে। সারাদিনের ক্লান্তি অবসাদ দূর হয়ে যাবে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস ইসবগুল ও তোকমা দানা খেলে তা আপনার শরীরে খারাপ কোলেস্ট্রল দূর করতে সাহায্য করবে। শরীরের মেদ ভুঁড়ি কমে যাবে।

তোকমা দানা খাওয়ার অপকারিতা

তোকমা দানা খাওয়ার তেমন অপকারিতা নাই বললেই চলে। তবুও প্রতিটি খাবারের উপকারিতার পাশাপাশি সামান্য কিছু হলেও অপকারিতা রয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের তোকমা দানা খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তোকমা ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয় যা একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
আবার ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ছোট বাচ্চাদের এটি খাওয়ালে পেটে যাবতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এটি শিশুদের দম বন্ধ করার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাই অবশ্যই ছোট বাচ্চাদের তোকমা দানা খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। এটি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্করা গ্রহণ করুন।

মন্তব্য ঃ তোকমা দানা খাওয়ার উপকারিতা

তোকমা দানা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানিয়েছি উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আশা করি আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। নিয়মিত তোকমা দানা খেলে তা আমাদের জন্য অনেক উপকারে আসবে। এরকম নতুন নতুন আলো তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url