পায়ের নখের কুনি দূর করার ঘরোয়া ১০ টি উপায়

পায়ের নখের কুনি দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। পায়ের কুনি একটি সাধারণ সমস্যা তা অনেকেরই মাঝেমাঝে হয়ে থাকে। এটি খুবই বিরক্তিকর এবং অনেক সময় অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা সৃষ্টি করে।
পায়ের-নখের-কুনি-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়
পায়ের পনির দূর করার সহজ এবং ঘরোয়া কিছু উপায় এবং চিকিৎসা রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন তাহলে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক পায়ের নখের কুনি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

সূচিপত্র ঃ পায়ের নখের কুনি দূর করার ঘরোয়া উপায়

পায়ের নখের কুনি দূর করার ঘরোয়া উপায় 

নখ মানুষের শরীরের একটু গুরুত্বপূর্ণ অংশ অনেক কারণে পায়ের নখের কুনি হয়ে থাকে। এ সময় অনেক ব্যথা করে, প্রবাহ হয়, লাল হয়ে যায় এবং ইনফেকশন ও হয়ে যায়। আবার সংক্রমণ হলে পুজ ও হয়ে যায়। সাধারণত পায়ের বুড়ো আঙুলে এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত টাইট জুতা পরা, পায়ে আঘাত পাওয়া, পায়ের নখ কাটার সময় গভীর করে কাটা থেকে এরকম সমস্যা হয়ে থাকে। এছাড়াও ডায়াবেটিস ও পায়ে রক্ত সঞ্চালন কম হলে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
পায়ের নখের ইনফেকশন দেখা দিলে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি তা দূর করতে পারেন। আপনাদের সুবিধার্থে ঘরোয়া কিছু উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করা হলো-

আপেল সিডার ভিনেগার ঃ আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা বিভিন্ন রোগ জীবাণু ধ্বংস করতে কার্যকরী। একটি গামলায় বা বড় পাত্রে আপেল সিডার ভিনেগার ও অ্যান্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশ মিশিয়ে সেই পানিতে ২০ মিনিটের মতো পা ডুবিয়ে রাখুন। তারপর পা পরিষ্কার করে অলিভ অয়েল বা ট্রি ট্রি অয়েল ম্যাসাজ করুন। এরপর একটি ব্রাশের সাহায্যে পায়ের নখ পরিষ্কার করুন এবং কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে নিন। এটি আপনি কয়েকদিন করলে অনেক ভালো ফলাফল পাবেন। আপনার পায়ের ইনফেকশনের উপর নির্ভর করে কয়েকদিন এটি চালিয়ে যান।

হলুদ ঃ হলুদে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যা আমরা সবাই কমবেশি জানি। হলুদের গুরার সাথে পানি মিশিয়ে সেটি আক্রান্ত স্থানে পেস্ট লেবু ও চিনির স্ক্রাব করে লাগিয়ে দিন। কয়েক ঘন্টা রাখার পরে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। কয়েকদিন এভাবে ব্যবহার করুন দেখবেন দ্রুত তা সেরে গেছে।

পেঁয়াজ ঃ পেঁয়াজ রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল জাতীয় উপাদান যা বিভিন্ন রোগ জীবাণু ধ্বংস করে। পেঁয়াজের রস ফাঙ্গাল সংক্রমণকে ধ্বংস করে। একটি পেঁয়াজ থেকে রস বের করে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন।

লেবু ও চিনির স্রাব ঃ লেবু পায়ের নখের মরা চামড়া এবং ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রেখে লেবু এক স্লাইজ করে তার উপর চিনি দিয়ে স্ক্রাব করুন এতে পায়েল মরা কোষ দূর হয়ে যাবে বা নরম মসৃণ রাখতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি পায়ের কুনি হওয়া থেকে রক্ষা করবে।

মাউথওয়াশ ঃ মাউথওয়াশ ফাঙ্গালবিরোধী অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। একটি পাত্রে মাউথ ওয়াশ নিয়ে যে নখে কুনি হয়েছে সে আঙ্গুল ডুবিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।

রসুন ঃ রসুন এ রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ফাঙ্গাস এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। একটি রসুন থিতিয়ে
নিয়ে একটি পানিতে মিশিয়ে নিন। সেই পানির মধ্যে আঙ্গুল ডুবিয়ে রাখুন। যতদিন আপনার সমস্যার সমাধান না হচ্ছে ততদিন এই কাজ করুন দেখবেন খুব দ্রুত আপনার পায়ের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

ট্রিট্রি ওয়েল ঃ ট্রিট্রি ওয়েল প্রাকৃতিক এন্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে যা বহু বছর থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রথমে সাবান দিয়ে পা ভালো করে পরিষ্কার করে নিন এবার পা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিয়ে সেখানে ট্রিট্রি ওয়েল লাগিয়ে রাখুন কয়েক ঘণ্টার জন্য।

ইউরিয়া পেস্ট ঃ ইউরিয়া ছত্রাক ধ্বংস করে। ইউরিয়া রয়েছে এমন কিছু ক্রিম আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এটি এন্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করবে তবে ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে অবশ্য চিকিৎসাতে পরামর্শ নিন।

এছাড়াও চা গাছের তেল ছত্রাক ধ্বংস করতে সাহায্য করে।আবার ঘরোয়া ভাবে নখ কুনি সারাতে গেলে ভুট্টার গুড়ো ব্যবহার করতে পারেন। আবার ভিনেগার নখকুনি দূর করতে সাহায্য করে। আপনি ঘরোয়া এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে অনেক অংশে এই যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে পারেন।

পায়ের নখের কুনি কি

পায়ের কুনি এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা ত্বকের এক ধরনের সংক্রমণ। এটি পায়ের নখের এক সাইডে হয়ে থাকে বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙুলে এই সমস্যা বেশি দেখাবে। হাতেও এই সমস্যা দেখা দেয় তবে হাতে থেকে পায়ের সমস্যা তুলনামূলক অনেক বেশি হয়ে থাকে। কুনি হওয়া ত্বকের ফাঙ্গাসের কারণে হয়ে থাকে। সময় মত সঠিক চিকিৎসা না নিলে এটি অনেক সময় অনেক ভোগান্তির শিকার হয় এবং দিন দিন আরো গুরুতর হয়ে পড়ে।

হাত-পায়ের নখের কুনি হওয়ার কারণ

বিভিন্ন কারণে হাত পায়ের নখের কুনি হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো-
  • ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল সংক্রমণ
  • নোংরা বা অপরিষ্কার পা
  • খুব টাইট জুতা পরিধান করা
  • নখ কাটতে গিয়ে একটু গভীর করে কাটা
  • পায়ে আঘাত পাওয়া
  • অতিরিক্ত পা ঘামা

হাত পায়ের নখ ভালো রাখার টিপস

হাত পায়ের নখ ভালো রাখার জন্য কিছু টিপস অবলম্বন করতে পারি যেমন-
  • নিয়মিত নখ পরিষ্কার রাখা
  • নখের মধ্যে কোন ময়লা জমতে না দেওয়া
  • নখ বড় হয়ে গেলে তা কেটে ফেলা
  • ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়া।
  • নখ বা আঙ্গুলের মাথা বিভিন্ন ক্ষত ও আঘাত থেকে রক্ষা করা।

নখকুনি হলে কি করা উচিত

নখকুনি হলে অত্যন্ত অস্বস্তি এবং যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা সৃষ্টি হয় তাই এরকম অবস্থা দেখা দিলে বসে না থেকে দ্রুত ও চিকিৎসা নিতে হবে। তবে পায়ের নখের কুনি দূর করার ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে আপনি বাড়িতে বসেই নখের যত্ন নিতে পারবেন এবং খুব সহজেই তা সারিয়ে তুলতে পারবেন। নখকুনি হলে আপনি পা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন খেয়াল রাখবেন তা যেন অতিরিক্ত না ঘামে।
নখকুনি হলে নিয়মিত নখের যত্ন নিন খেয়াল রাখুন যেন কোন ময়লা সেখানে না লাগে। ঢিলেঢালা জুতা ব্যবহার করুন, নখ বড় হলে তা নিয়মিত কেটে পরিষ্কার রাখুন। যখন দেখবেন উপরোক্ত ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার পরেও আপনি আরাম পাচ্ছেন না তাহলে বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

নখকুনি হলে কি করনীয়?

কুনি হলে অবশ্যই আমাদেরকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তা না হলে এর সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলবে আর আপনার ভোগান্তিও বেশি হবে। নখকুনি হলে আমরা নিম্নলিখিত টিপসগুলো অবলম্বন করতে পারি।
  • হাত পা ধোয়ার পরে ভালোভাবে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি লেগে না থাকে।
  • নিয়মিত হাত পায়ের নখ ছোট করতে হবে এবং পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • যখন দেখবেন নখকুনি হয়েছে তখন সেখানে অতিরিক্ত খোচাখুঁচি বন্ধ করুন।
  • হাত পায়ের নখ কাটার সময় সতর্কতার সাথে কাটুন যেন অতিরিক্ত অংশ কেটে না যায় বা গভীর হয়ে না কাটে।
  • অতিরিক্ত বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

নখের যত্ন না নিলে কি কি সমস্যা হতে পারে

নিয়মিত হাত পায়ের নখের যত্ন না নিলে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত এই সংক্রমণটি প্রথমে অল্প থাকলেও পরে আস্তে আস্তে তা বেড়ে যায় এবং সেটি লোকের ভেতর থেকে চামড়া ভেদ করে মাংস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এর ফলে সেখানে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং পুঁজ দেখা দেয়। আর এরকম হলে এটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় রূপ নেয়। এর ফলে চরম ভোগান্তি দেখা দেয়। তাই নিয়মিত নখের যত্ন নিন।
তা না হলে এটি পরবর্তীতে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় নখকুনি থেকে নখের একজিমা পর্যন্ত হয়ে যায়।

নখের কুনি দূর করার চিকিৎসা

নখের কুনি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাল এর ইনফেকশন এর কারণে হয়ে থাকে। ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে যদি আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি না পান তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। কিছু ক্রিম ও ঔষধ রয়েছে যা ব্যবহার করলে খুব দ্রুত এই সমস্যা থেকে আপনি সমাধান পাবেন।
এছাড়াও নখের কুনি দূর করার জন্য কিছু ক্রিম বা ওষুধ রয়েছে। কয়েকটি ক্রিমের নাম আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম।-যেমন
  • ডার্মাসোল ক্রিম
  • টার্বিন ক্রিম এবং ট্যাবলেট
  • টারবিসল ক্রিম
  • জেনসন ভায়োলেট
এগুলো ঔষধ আপনি ব্যবহার করতে পারেন কবে অবশ্যই ব্যবহার বিধি এবং খাওয়ার নিয়ম কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করবেন।

শেষ কথা ঃ পায়ের নখের কুনি দূর করার ঘরোয়া উপায়

পায়ের নখের কুঁড়ি দূর করার ঘরোয়া উপায় আপনাদের সাথে উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা অনেক উপকৃত হতে পারবেন। উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। এরকম আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url